টাঙ্গাইল এক মাদরাসার শিক্ষক আব্দুর রহিম (ছদ্ম নাম)। উলুমুল হাদিস পড়ে মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে জয়েন করেছেন আট বছর আগে। এ আট বছরে তার এক টাকাও বেতন বাড়েনি। গত এক বছরে মূল্যস্ফীতিতে সব কিছুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আট বছর আগের তুলনায় সব কিছুর দাম বেড়েছে বহু গুণ। কিন্তু আব্দুর রহিমের মত অনেকেরই বেতন বাড়েনি এক টাকাও।
আব্দুর রহিম বলেন, যে টাকা বেতন পাই সেটা দিয়ে বর্তমান সময়ে চলা অনেক কঠিন হয়ে যায়। অবশ্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে বারবার বেতন বাড়ানোর কথা বলার পর তারা আমাকে একটি মসজিদে ইমামতি করার অনুমতি দিয়েছেন। এখন মসজিদ থেকে কিছু অর্থ পাই এটা সত্য। কিন্তু দায়িত্ব বেড়েছে বহুগুণ।
রাজধানীর একটি মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল্লাহ (ছদ্মনাম)। শিক্ষকতার পেশায় ঢুকেছেন ৫ বছরের বেশি সময় হয়েছে। এ সময় তিনি অনেক কঠিন সময়ে মুখোমুখি হয়েছেন। প্রথমমত তার তেমন বেতন বাড়েনি। এছাড়াও করোনার সময় মাদরাসা থেকে কোনো সাহায্য পাননি। হাতে জমানো কোনো টাকা ছিলো না। হাঠাৎ মাদরাসা বন্ধ হয়ে যায়। খালি হাতেই তাকে বাড়ি চলে যেতে হয়। এরপরের সময়টা কেটেছে অনেক কষ্টে।
আব্দুল্লাহ বলেন, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করেছি। আর এই ইলমে দ্বীন প্রচার করার উদ্দেশ্যেই শিক্ষাকতার পেশায় ঢুকে ছিলাম। কিন্তু এ পেশায় আমার তিক্ততা চলে এসেছে। শুধু অর্থকষ্টে এ তিক্ততা এসেছে তা নয়। পারিপার্শ্বিক অনেক কারণেই তিক্ততা এসেছে। আমি এখন ইলমে দ্বীন প্রচারের জন্য ভিন্ন কোনো মাধ্যম খুঁজছি।
শিক্ষকদের বেতনটা বাড়ানো হলে আল্লাহপাক টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন: মুফতি মানসুরুল হক
শিক্ষকদের বেতন না বাড়ানো বিষয় নিয়ে কথা হয় মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ সংলগ্ন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শাইখুল হাদিস মুফতি মানসুরুল হকের সাথে। তিনি বলেন, মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন বাড়ে না এটা বাস্তব। যারা মাদরাসার বড় দায়িত্বে আছেন তাদের উচিত আলেম-ওলামাদের খেদমত করা। তাদের কষ্টের দিকে দৃষ্টি দেওয়া। গত বছর আমার মাদরাসার প্রত্যেক শিক্ষকের গড়ে ৩ হাজার টাকা করে বেতন বাড়িয়েছি। আমি চেষ্টা করি আলেম-ওলামাদের কষ্ট লাঘব করার।
তিনি আরও বলেন, অনেক কর্তৃপক্ষ মনে করেন, আগে মাদরাসার ফান্ডে টাকা জমা হোক তারপর শিক্ষকদের বেতন বাড়াবো। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কখনো ফান্ডে টাকা জমাও হয়না আর শিক্ষকদের বেতনও বাড়ানো হয় না। কিন্তু যদি শিক্ষকদের বেতনটা আগে বাড়ানো হয় তাহলে দেখা যাবে আল্লাহপাক টাকার ব্যবস্থা করে দেবেন।
আমি মনে করি মাদরাসার বড় বড় বিল্ডিং হওয়ার চেয়ে শিক্ষকদের বেতনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরি: মুফতি মুনীরুজ্জামান
রাজধানী ঢাকার সায়বাদ বায়তুন নূর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মুনীরুজ্জামানের সঙ্গেও কথা হয় একই বিষয়ে। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে তো জানিই না। কওমি মাদরাসায় বেতন বাড়ে না এটা সত্যিই আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়।
আর যদি না বেড়ে থাকে আমি মনে করি এটা কখনোই উচিত নয়। মাদরাসায় যারা আছে তাদের বেতন তো সবার আগে বাড়া উচিত। তারা আল্লাহর জন্য কাজ করে। তাদের এমন সম্মান করা উচিত যেনো তারা আল্লাহর উপর ভরসা করেই জীবনাতিপাত করতে পারে। সারা দুনিয়ার জিনিসপত্র দাম বাড়ে, কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন বাড়বে এটা বড় কথা না। বড় কথা হলো তারা আল্লাহর উপর আস্থা রেখে চলে, তাদের প্রতি এমন খেয়াল করা উচিত যেনো তারা মানুষের মুখাপেক্ষি না হয়।
তিনি আরো বলেন, যেসব মাদরাসাগুলো শিক্ষকদের বেশি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন সে মাদরাসাগুলো দিনদিন উন্নতি হচ্ছে। আমি তো দেখি যে সেসব মাদরাসাগুলোর রেজাল্টও ভালো হচ্ছে ভালো চলছে। তাহলে কেন উস্তাদদের বেতন বাড়বে না। আমার বুঝে আসে না।
তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের অষ্ট মূল নীতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, অস্থায়ী আসবাবের উপর ভিত্তি করে চলা যাবে না। যুগের সাথে মিলিয়ে অবশ্যই তাদের বেতনও বৃদ্ধি করতে পারে।
আমি আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি, বাইতুন নূর মাদরাসা এত বড় মাদরাসা না। আমি উস্তাদদের বেতনের জন্য যেনো আমার কাছে না আসতে হয়। আমি মনে করি আমিও আলেম তারাও আলেম। একজন আলেম আমার কাছে টাকা পয়সার জন্য কেনো আসবে। আমি ইনক্রিমেন্ট সিস্টেম করেছি। বছর বছর অটো বেতন বাড়বে। আসবাবপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার পর আমি সবার বেতন বাড়িয়েছি দুই হাজার করে। আলহামদুলিল্লাহ দিন দিন মাদরাসার উন্নতি হচ্ছে। আমি বরকত পাচ্ছি। আমার এখানে বিবাহ ভাতা সন্তান হলে ভাতার সিস্টেম আছে। আমি অনেক অনেক বরকত পাচ্ছি। আমি সবদিক দিয়ে লাভবান হচ্ছি। তাহলে তাদের বেতন বাড়াবো না কেনো।
-এটি