|| মুহিব খান ||
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সাহেব (গাজী ভাই) অন্তত ২০ বছর আগে থেকে আমার বড় ভাইয়ের মত বন্ধু। গত ২০ বছরে কোনদিনও তিনি আমাকে তার দল ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিতে বলেননি। একবারও না। ঠিক ততোদিন আগেই মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই রহঃ আমাকে চিনেছেন, জেনেছেন, পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ চরমোনাইয়ের নিজ বাড়িতে ও মাদরাসায় মেহমানদারীও করেছেন, একবারও তরিকায় বা দলে যোগ দিতে বলেননি।
দলটির বর্তমান আমীর ও নায়েবে আমীর সাহেবের সঙ্গেও আমার ২০০২ থেকে পরিচয় এবং ভাই-ভাইজান সম্বোধন ও সম্পর্ক । তারা আমাকে যথেষ্ট আদর সম্মান মুহব্বত করেন, আমিও করি, তারা আমাকে বার্ষিক মাহফিলে দাওয়াত করেছেন কিন্তু কখনই আমাকে দলে যোগদানের সরাসরি প্রস্তাবে বিব্রত করেননি। একইভাবে ফয়েজী সাহেব, হেমায়েত সাহেব, আকন সাহেব, ইমতিয়াজ ভাই, ফেরদৌস ভাই, ইফতেখার তারিক ভাইদের সঙ্গে আমার ২০ বছরের পরম বন্ধুত্ব ও উঠাবসা চলাফেরা থাকা সত্ত্বেও তারা কেউই আজ তক আমাকে তাদের দলের সদস্য হতে জোর দিয়ে বলেননি।
কারণ, তারা সবাই আমাকে গোটা উম্মাহর কবি ও সম্পদ করেই রাখতে চেয়েছেন এবং আমার চিন্তা ও কাজে সহযোগী হয়েছেন। অন্তত আমার ব্যাপারে তাদের এই উদার উন্নত মানসিকতা না থাকলে আমি তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক ধরে রাখতে পারতাম না।
উল্লেখ্য যে, ঠিক ততোদিন ধরেই দেশের অন্যান্য ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আমার সুন্দর ও ভাল সম্পর্ক। আদর সম্মান ও মুহব্বতে তারাও আমাকে কৃতার্থ করেছেন এবং তারাও আমাকে গোটা উম্মাহর জন্য সঁপে রেখেছেন, কেউ কোনদিন, কখনই নিজ নিজ দলের কৌটায় ভরতে জবরদস্তি করেননি। জমিয়ত, মজলিস, খেলাফত, নেজাম ও অন্যান্য সবার কথাই বলছি। এটা আমাকে আমার কাজে আরাম ও স্বস্তি দিয়েছে।
তবে এই সব দল ও সংগঠনের সাধারণ কর্মীরা আমার সঙ্গে তাদের সর্বোচ্চ শীর্ষ নেতৃত্বের পারস্পরিক মূল্যবোধ, শ্রদ্ধাবোধ ও সম্পর্কের ধরণ, কারণ, মাত্রা ও প্রকৃতি অনুধাবন করতে না পেরে, না জেনে, না বুঝে, কখনও আবেগতাড়িত হয়ে, কখনও অতি উৎসাহী হয়ে, কখনও অতি পাণ্ডিত্যের বেগে, কখনও বাহ্যিক ও খণ্ডিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানান ধারণার প্রচার ও কাদাছুঁড়োছুড়িতে লেগে যায়। এদের চিন্তার স্থিতি নেই, পরিপক্কতা নেই। আজ যারা কোন কারণে মহা খুশি তো কাল তারাই অন্য কারণে মহা বিরূপ হয়ে যায়। আর এ সুযোগে আরও নানা পথের নানা মতের বুদ্ধিজীবিদেরও (!) কলম জেগে ওঠে।
এটা দুঃখজনক এবং ইসলামী রাজনৈতিক কর্মীদের দূরদর্শিতা দায়িত্ববোধ ও ভবিষ্যত অগ্রগতির প্রশ্নে হতাশাজনক। কিন্তু আমি তা জেনেই পথ চলি।
যাক, শুরুর কথাটা শেষ করি, গাজী ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের একান্ত ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের দায়িত্ববোধ এবং অকৃত্রিম আন্তরিকতার টানে আমি গতকাল তার নির্বাচনী এলাকা গাজীপুর সিটি আসনে তাকে স্বতস্ফূর্ত সঙ্গ ও সমর্থন দিয়ে এসেছি। ফলাফল যাই হোক, যেহেতু তিনি আমার একান্ত আপনজন, তাই তিনি যে প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন, আমি সেই প্রতীকেই মানুষের সমর্থন চেয়েছি। এমনকি তার নির্বাচনে, তার এলাকায়, তার সেই প্রতীকটি ধারণ ও প্রদর্শনও করেছি। আর এটাই তো করণীয় ছিল।
স্বাভাবিক বিষয়টিকে কোনো দিকেই অতিরঞ্জিত না করার আহবান রেখে পরিষ্কার জানাচ্ছি- কেউ জোর করে নেয়নি, কারও মুরিদও হইনি, কোনো দলেও যোগ দিইনি। সারাদেশেও নয়, দল-মতের হিসেবেও নয়, দেশের রাজনীতির ভাল-মন্দ বিচারেও নয়, শুধু গাজীপুর সিটি নির্বাচনী এলাকায় আমার অনেক কাছের প্রিয় ভাই ও বন্ধু, ব্যক্তি গাজী আতাউর রহমানের পাশে ও পক্ষে প্রকাশ্যে দাঁড়িয়েছি। এতে আমি আনন্দিত।
কেএল/