বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ ।। ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৪


মুফতী ফয়জুল করীমের মেয়ের বিবাহোত্তর ওলীমা নিয়ে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী ||

মুফতী ফয়জুল করীম হাফি.'র মেয়ের বিবাহোত্তর ওলীমা নিয়ে দু'দিন যাবত অনলাইন অফলাইন সর*গরম। রাজনৈতিক মূল্যায়নের পাশাপাশি শরয়ী বিশ্লেষণ সামনে আসছে।  রাজনৈতিক মূল্যায়নের দিক থেকে আমি এটাকে পজিটিভলিই নিচ্ছি। এধরণের পরিবেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারীদেরকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।

আলোচনা, পর্যালোচনা ও সমালোচনায় বিরোধী মতের ব্যাপারে আচরণে ও শব্দচয়ণে সহনশীল হতে উদ্ভুদ্ধ করবে। কারণ যাদের সাথে একসাথে বসতে হবে,খেতে হবে,হাসতে হবে তাদের নিয়ে যাচ্ছেতাই আচরণ ঠিক নয়,এমনটা উপলব্ধির পরিবেশ সৃষ্টি করবে।  দল মত নির্বিশেষে সবার উপস্থিতি আ*হামরি ফলাফল বয়ে না আনলেও রাজনীতিতে এর গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত সংবাদ শিরোনাম ও সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ দেখলেই আশ করি ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।। রাজনীতির মার/প্যাঁচ কমবুঝি বিধায় এ বিষয়ক আলাপ রাজনীতিবিদদের জন্যই রেখে দিলাম।

শরয়ী বিষয়ক কিছু আলাপ করা জরুরী মনে করছি। অনেকেই ইনবক্সে অনেক প্রশ্ন করছেন। এগুলো আলাদা জবাব দেয়ার চেয়ে এখানে পরিস্কার করা ভাল মনে করছি।

১) বিয়ের এতদিন পর ওলীমা কেন? 
যৌক্তিক প্রশ্ন। ওলীমার নিয়ম হল যতদ্রুত করা যায়। কোনরুপ গ্রহণযোগ্য কারণ ব্যতীত এতদিন পরে করা সুন্নাহ পরিপন্থী, অনুত্তম। এ আয়োজন দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে যতটুকু জানি তা হল ছেলে স্ব পরিবারে প্রবাসে ছিলেন তাই। কৌতুহল বশত shamsud Doha Talukder ভাইকে জিজ্ঞাসা করেও এমনটাই জানলাম। এখন কারণ যদি এটাই হয় তাহলে তো এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠানোর সুযোগ দেখছিনা।

২) ওলীমা না বৌভাত? 
কেউ কেউ অবশ্য এ আয়োজনকে মেয়ে পক্ষের আয়োজন মনে করে তা প্রমাণের জন্য ওলীমা শব্দের যথার্থতা নিয়ে আলাপ তুলছেন। এদের কেউ কেউ তো জানেনই না বিয়ে হুজুরের ছেলের না মেয়ের!! ব্যাপারটা মজাদার। মূলত আয়োজক ছেলের বাবা, মেয়ের বাবা নন। সুতরাং মেয়ের বিয়ের খাবার কিভাবে ওলীমা হয়? বৌভাত হবে! এধরণের প্রশ্ন নিছকই তর্কের জন্য।

৩) ফয়জুল করীম সাহেব ও তাঁর ভক্তরা কেন বলছেন মেয়ের ওলীমা?
বিয়ে বর ও কনেকে ঘিরেই হয়। বিয়ে পরবর্তী খাবারও ( ওলীমা) তাদেরকে ঘিরেই, হ্যাঁ আয়োজক হবেন ছেলে পক্ষ। সুতরাং এ আয়োজনে ছেলে ও মেয়ে উভয় পক্ষই দাবী করতে পারে এটা আমাদের ওলীমা। এর মাধ্যমে শরিয়তের বিশেষ কি বিধান বা সীমা ল*ঙ্ঘন করা হলো আমার বুঝে আসছেনা। তাহলে এধরণের আয়োজনে মেয়ের বাবা কি শব্দ বলবেন সেটা নির্ধারণ করে দিলে ভাল হয়। ওলিমায় মেয়ে পক্ষের পরিচিত ও আত্মীয়দের তো মেয়ে পক্ষই দাওয়াত দিবে। এটাইতো স্বাভাবিক।

সুতরাং ফয়জুল করিম সাহেব তার নিজের মেয়ের ওলিমায় তার নিজের কাঙ্খিত মেহমানদের দাওয়াত দেওয়া বিষয়ে হাস্যকর প্রশ্ন উত্থাপন কেন?
নাকি ওলিমা মানে শুধু ছেলে পক্ষই দাওয়াত দিতে পারবে, মেয়ে পক্ষের কেউ ওলিমা দাওয়াতে আসতে পারে না, এই শরীয়ত কোন কিতাবে আছে?

৪) শুধুই ধনীদের দাওয়াত দেয়া হল গরীবদের নয়!
প্রশ্নকারীদের উদ্দেশ্য, উদ্যিষ্ট ক্লিয়ার নয়। অনলাইনে প্রচারিত ও প্রকাশিত কয়েকজনের ছবির পরিপ্রেক্ষিতে কৃত এ দাবী সত্য নয়। আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কয়েকধাপে আসা মেহমানদের অনেকেই এমন ছিলেন। যারা প্রচলিত অর্থে ধনী নন। যাদের দাওয়াত দেওয়া হলো তারা সবাই ধনী গরিব কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয় নাই এমন আজগবি কথার প্রমাণ কি? কোন ব্যক্তি আত্মীয়-স্বজন ধনী হলে বা বন্ধু-বান্ধব ধনী হলে সে কি তার আত্মীয় বন্ধুদের ধনী বলে ওলিমার দাওয়াত দিবে না?

এখানে আরেকটা বিষয়ও ক্লিয়ার হওয়া দরকার বিরোধিতাকারীরা ফকির বলতে কাদের বুঝাতে চাচ্ছেন? তারা যাদেরকে ফকীর মনে করেন এধরণের কয়জনকে তাদের নিজেদের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?  কেউ কেউ একটি হাদিসের অংশবিশেষ প্রচার করে এ আয়োজনকে প্রশ্ন*বিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। যেখানে ধনিদের দাওয়াত দিয়ে গরিবদের দাওয়াত না দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। হাদিসে বর্ণিত ফকির মানে কি সারা দেশের ফকির উদ্দেশ্য? আত্মীয়দের মধ্যে কেউ গরীব থাকলে তাকে দাওয়াত না দিলে মূলত হাদিসের ধমকির অন্তর্ভুক্ত হবে,অন্যথায় নয়।

ওলিমার দাওয়াত পাওয়ার পরও যারা না যায় তাদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতাকারী বলা হয়েছে। এ হাদীস প্রচার করা হচ্ছে না কেন? বিদ্বেষ যেন আমাদের বেইনসাফ না বানায়।

৫) একজন পীর কিভাবে এতো বিলাসবহুল আয়োজন করলেন? কেন করলেন? 
পীর সাহেব আয়োজন করেছেন দাবীটাই ভুল। আয়োজন করেছেন ছেলের বাবা। হ্যাঁ, তিনি আমন্ত্রিত হয়ে তার পরিচিত, প্রিয় ও স্বজনদের নিয়ে গেছেন উপস্থিত করেছেন। এধরণের প্রোগ্রামে প্রত্যেকে নিজ নিজ পরিধি, সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ীই আয়োজন ও যোগাদান করেন। পীর সাহেব যদি তার নিজের বিয়ে বা ছেলের বিয়েতে এরকম বড় ধরনের আয়োজন করেন তাতে প্রশ্ন উঠানোর কোন কারণ দেখিনা।  এ নিয়ে ট্রল,বিদ্রুপ সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিত্ব ও রুচির দীনতা ও দৈন্যতাই প্রকাশ করবে।

৬) বিভিন্ন মত ও পথের লোকদের দেখা গেল কিন্তু ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দদের দেখা গেলনা কেন?
অনুষ্ঠানে হাজির হয়েই যখন চতুর্দিকে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের দেখলাম তখন আশপাশে থাকা পরিচিতদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ইসলামী দলের নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছে তো!? তখন তারা নিশ্চয়তা দিয়েই বললেন যে হ্যাঁ, যথাসাধ্য দেয়া হয়েছে। এখন দাওয়াত দেয়ার পরও যদি কেউ উপস্থিত না হয় এর দায় কার?

আল্লাহ আমাদের এক ও নেক করে দেন। পারস্পরিক মুহাব্বাত ও শ্রদ্ধাবোধ দান করুন। শরয়ী সীমালঙ্ঘন হয় এমন আলোচনা, সমালোচনা , পর্যালোচনা থেকে হেফাজত করুন।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ