বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ ।। ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৪


মাদরাসা পরির্তন ও একটি বেদনাতুর কাহিনী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবুল ফাতাহ কাসেমী

এ বছর আমাদের মাদরাসায় নাহবেমিরে সিরিয়ালের একটি ছাত্র হেদায়েতুন্নাহুতে ভর্তি হয়েছে। একদিন ক্লাস করার পর চলে যাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাছে ঢেকে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে দিল। কাঁদার কারণে কথাই বলতে পারছিলো না। অনেক বুঝিয়ে যে তথ্য পেলাম তা হলো, সে ভোলায় যে মাদরাসায় পড়েছে সে মাদরাসার উস্তাদদের ইহসান, তাদের বিরহ বিচ্ছেদ ও তাদের থেকে বিদায় নিয়ে না আসা-ই (কিংবা বিদায় নিয়েছে কিন্তু আগের উস্তাদরা ভালোভাবে বিদায় না দেয়া) তার মন খারাপ ও এখান থেকে চলে যাওয়ার মূল কারণ। 

তার কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে আমি তার উস্তাদকে ফোন দিলাম। বিনয়ের সাথে তাকে মাফ করে দেয়া ও না বলে আসার কারণে তার ভুল স্বীকার ও অনুতপ্ততার বিষয়টি তাকে জানালাম। 

তিনি ছাত্রের পেছনে তার ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রম, জিরো থেকে হিরো করার অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও যোগ্য করে তৈরি করার যে উপখ্যান শুনিয়েছেন তা আমাকেও নাড়া দিয়েছে। 

আমিও একজন শিক্ষক হিসেবে বুঝি, একটি ছাত্রকে লক্ষ ছাত্রের মাঝে প্রতিযোগীতার উপযোগী করে তোলা ও দিনরাত পরিশ্রম করে বেফাকের সিরিয়ালের জন্য প্রস্তুত করা কতটা কষ্টের! বিশেষত গ্রামের মাদরাসাগুলোতে শিক্ষকদের দিনরাত কষ্টের অব্যক্ত কাহানিয়া আমার জানা আছে। ছাত্র হিসেবে তার ইচ্ছেধীকারের কথা বলে সেই উস্তাদকে মাফ করে দেয়ার অনুরোধ জানালাম। যদিও আমার কাছে বিষয়টি খারাপ লেগেছে। 

এ ঘটনায় আমি দুটো দিক খুঁজে পেয়েছি। 

এক. আমাদের মাদরাসাগুলোতে উস্তাদ শাগরিদদের এক অপার্থিব পবিত্র সম্পর্ক ও বিরহ যাতনার এইযে নির্মল মান অভিমান যা এখনো টিকে আছে এবং যা পিতা পুত্রের সম্পর্কের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।

দুই. চোখ কান ফুটে গেলে আগের উস্তাদদের সাথে এক রকম ডেম কেয়ার ভাব নিয়ে ঢাকার সিরিয়ালপ্রতিযোগী মাদরসাগুলোতে ভর্তি হওয়া। এবং পরবর্তীতে সে মাদরসাাগুলোর সুনাম বয়ে আনা। 

মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব হাফি. এর কাছে মাওলানা আবদুল হাই পাহাড়পুরি রহ. এর কথা শুনেছি। তারা ঢাকার বাইরে যে মাদরাসায় পড়তেন সেখানের ক্লাস শেষ হওয়ার পরও বছর শেষে ভর্তির সময় সব ছাত্র মিলে সেই আগের মাদরাসায় চলে গেলেন। নতুন শিক্ষা বর্ষে পরবর্তী জামাত কোথায় ভর্তি হবেন তাও জানেন না। উস্তাদরা নিজে ঢাকায় এনে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন।

সব মিলিয়ে মাদরাসা পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তর্ক রয়েছে। 

আমার কাছে মনে হয়, ঢাকার বড় মাদরাসায় পড়ার সুনামের চেয়ে ভিত মজবুত করে দেয়া গ্রামের গুমনাম শিক্ষকদের কাছে পড়া অনেক শ্রেয়। যৌক্তিক কারণ নিয়ে আলোচনা করে আসাতে কোন দোষ নেই। 

আর যে মাদরাসায় ইলমি পরিবেশ নেই সেখানকার বাযৌক ছাত্রদের বড় মাশায়েখদের কাছে প্রেরণ করাও সংশ্লিষ্ট উস্তাদদের নৈতিক দায়িত্ব।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ