মাহফুজ আহমাদ
যে সকল তালিবুলইলম সাথী এবছর হাদিস নিয়ে লেখাপড়া করছেন, সুযোগ থাকলে মাদরাসার নিয়মিত দরস শুরু হওয়ার আগেই নিম্নোক্ত পাঁচটি বই পড়ে নিতে চেষ্টা করুন।
এক. শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা হাফিযাহুল্লাহ’র ‘নাশরুল মিরাসিন নাবাওয়ি’। এ বই পাঠে আপনি জানতে পারবেন, বর্তমান সময়ে হাদিস শিক্ষার ক্ষেত্রে কী কী দুর্বলতা রয়েছে এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী? লেখক হাদিস শিক্ষার্থীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনা পেশ করেছেন ৮০ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকায়।
দুই. ড. হামযা আল বাকরি হাফিযাহুল্লাহ’র ‘মাহিয়্যাতু উলূমিল হাদিস’। এর মাধ্যমে আপনি উলূমুল হাদিস এর পরিচয়, এই শাস্ত্রের পরিব্যাপ্তি ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারবেন। তাছাড়া বর্তমান সময়ে হাদিসের মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উলূমুল হাদিস শাস্ত্রের ব্যবহারের বেলায় কী পথ ও পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে; সে বিষয়ে সম্যক ধারণা হয়ে যাবে। সমকালীন কয়েকজন হাদিস বিশারদের মত ও কর্মকাণ্ডের অনেকটা বিস্তারিত আলোচনা পেয়ে যাবেন ড. হামযা আল বাকরি রচিত ২৪৮ পৃষ্ঠার মূল্যবান এই বইয়ে।
তিন. ড. আহমাদ সনোবার হাফিযাহুল্লাহ এর ‘মিনান নাবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইলাল বোখারি’ খুবই উপকারী একটি গ্রন্থ। হাদিস সংকলন ও সংরক্ষণের ইতিহাস-ইতিবৃত্ত তুলে ধরতে এই বইয়ে যে চমৎকার বর্ণনাভঙ্গি এবং আকর্ষণীয় পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে; তা সত্যি মুগ্ধকর। হাদিসের প্রামাণিকতা বিষয়ে অহেতুক সংশয় সৃষ্টিকারী হাদিস-অস্বীকারকারীদের খণ্ডনে বইটি আপনাকে নতুন পথ দেখাবে। ওদের সঙ্গে যুক্তিতর্কের বেলায় আপনি যে একাডেমিক উপায় গ্রহণ করা উচিত; ৪৪৮ পৃষ্ঠার এই বইটি আপনাকে সেটা শিখিয়ে দিবে অনায়াসেই।
চার. ড. বকর কুযুদিশলি বিরচিত ‘আসবাবু ইরাদিল হাদিস’ মূলত টার্কিশ ভাষায় রচিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণাকর্ম। আরবিতে এর অনুবাদ করেছেন শায়খ নাসরুল্লাহ আবদুহু এবং সম্পাদনা ও ভূমিকা লিখে দিয়েছেন ড. আহমাদ সনোবার। সাহাবা যুগে হাদিস বর্ণনার পেছনে কী মোটিভেশন ছিলো, সাহাবিগণের হাদিস বর্ণনার ধরন কী ছিলো ইত্যকার নানান প্রসঙ্গ নিয়ে নাতিদীর্ঘ আলোচনা রয়েছে এই বইয়ে। ৪৬৪ পৃষ্ঠার তথ্যবহুল এই গ্রন্থ আপনার জন্য বেশ কাজে লাগবে; নিঃসন্দেহে।
পাঁচ. শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামা হাফিযাহুল্লাহ’র ‘কালিমাত আন মানহাজিল ইমাম বোখারি’ মূলত শায়খের কয়েকটি বয়ানের সংকলন। তন্মধ্যে একটি বয়ান ছিলো সাউথ আফ্রিকার প্রসিদ্ধ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ‘আযাদভিল মাদরাসা’র খতমে বোখারি জলসায় প্রদত্ত ইলমি বক্তব্য। অবশ্য শেষদিকে শায়খের ছেলে ড. মুহি উদ্দিন আওয়ামা হাফিযাহুল্লাহ এর একটি গবেষণা-প্রবন্ধও সংযুক্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে বইটি আমাদের জন্য বেশ জরুরি। হাদিস বর্ণনা ও নির্বাচনে ইমাম বোখারি রাহিমাহুল্লাহ এর রীতিনীতি কেমন ছিলো? সহিহ বোখারির ওপর উত্তাপিত হাদিস অস্বীকারকারীদের অবান্তর কয়েকটি অভিযোগের সংক্ষিপ্ত অথচ সমৃদ্ধ জবাব পেশ করা হয়েছে ১৭৬ পৃষ্ঠার চমৎকার এই বইয়ে।
আমার বিশ্বাস, মাদরাসার নিয়মিত দরস আরম্ভ হওয়ার পূর্বে কোনো তালিবুলইলম সাথী উপর্যুক্ত বইগুলো অধ্যয়ন করে নিলে হাদিসের কিতাবাদি পড়তে তার ভিন্ন এক স্বাদ অনুভূত হবে। হাদিস শাস্ত্রের ওপর তার আত্মবিশ্বাস ও অভীষ্ট জ্ঞান অর্জনে এই বইগুলো যথেষ্ট সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।
কেএল/