বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩ ।। ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ ।। ১৯ জিলকদ ১৪৪৪


দেশের ৫ ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এদেশের প্রতিটি পরতে রয়েছে ইসলামের সুবাস। ইসলামের সৌন্দর্যকে সুনিপুনভাবে এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দিনরাত এক করে কাজ করে যাচ্ছে বেশকিছু ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র। দেশ সেরা এসব গবেষণা কেন্দ্র থেকে পাঁচটির সঙ্গে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবেন তরুণ আলেম লেখক মোহাম্মদ ইবনে ইউসুফ

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা
‘মারকাজুল ফিকরিল ইসলামী’ বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠা কাল ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দ। কওমি ঘরানার প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ। সেখানকার আইন গবেষণা বিভাগের প্রথম বর্ষের প্রথম ছাত্র ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আব্দুর রহমান রাহিমাহুল্লাহর হাতে প্রতিষ্ঠিত এ গবেষণা কেন্দ্র। তিনি মূলত গতানুগতিক মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্বীনি ইলমের আমানতটি সংরক্ষণের পাশাপাশি তা দ্বারা জাতীয় পর্যায়ে কাজ করে সাধারণ জনগণকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের অনুপ্রবেশের পণে ব্রতি ছিলেন।

এ কারণেই তিনি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মাদ্রাসার পরিবর্তে মারকাজ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এটি মাদ্রাসাভিন্ন কিছু নয়। এভাবে মারকাজ প্রতিষ্ঠার পিছনে মূল কার্যকারণ ছিলো, ইসলামী আইন গবেষণায় আধুনিকতা এনে তা জাতীয় পর্যায়ে সর্বসাধারণের নিকট ব্যাপকতর করে তোলা। এই গবেষণাগারটি ইসলামী আইনের পাশাপাশি ইসলামী অর্থনীতি এবং ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও একক মর্যাদায় বিশিষ্ট করে তুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে এখানে পক্ষকালব্যাপি একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে ১৫ দিনব্যাপী এক অর্থনৈতিক কর্মশালা ও সেমিনার আয়োজন করা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে এখান থেকে গবেষণামূলক ছোট পুস্তিকা ও বই প্রকাশিত হয়। এতে ইসলামী আইন গবেষণার পাশাপাশি উচ্চতর গবেষণার জন্য উলুমুল হাদিস, কেরাত ও অন্যান্য বিভাগ আপন গতিতে সচল।

মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
এটি একটি গবেষণামূলক উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে অবস্থিত। ১৯৯৬ সালে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে এর কার্যক্রম পল্লবীতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করা হয়। এরও কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটির সিংহভাগ কার্যক্রম ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুরে স্থানান্তরিত করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবুল হাসান মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ও তার ভাই গবেষক আলেম মুফতি আব্দুল মালেক। এটি ইলমে নববীর তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের জন্য ওলামায়ে কেরামসহ সর্বসাধারণের নিকট ব্যাপক আকারে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। বিশেষত এটি উচ্চতর উলুমুল হাদীসকে বিশ্বমানে উন্নীত করায় বাংলাদেশকে বৈশ্বিক আলেম মনীষাদের কাছে একটি স্বীকৃত অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি বিশেষত্ব হল, এটি দাওয়াহ বিভাগের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রমের দ্বারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের ঈমান-আমলকে বিভিন্ন প্রতারক নামধারী ধর্মগোষ্ঠী ও অসাধু লোকদের গোমরাহী থেকে হেফাজত করে। এখান থেকে গবেষণা পত্রিকা মাসিক আলকাউসার  ত্রৈমাসিক নারী ও পাক্ষিক রিসালা প্রকাশিত হয়।

মারকাজুল বুহুস আল ইসলামিয়া ঢাকা
এই মারকাজটি ঢাকার মিরপুর-১ এ অবস্থিত। প্রখ্যাত মুফতি তাকি উসমানীর শাগরেদ, দারুল উলুম করাচির ছাত্র এবং পরবর্তীতে উস্তাদ, ‘আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের’র ব্যাখ্যাগ্রন্থ ”তাসকীনুল আরওয়াহ” এর লেখক মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন ২০০৬ সালে উচ্চতর ইসলামি আইন তথা ফিকহ গবেষণার জন্য এ প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন। যুগজিজ্ঞাসার সমাধানের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য ও যুগোপযোগী ফতোয়া বিভাগ। এখানে কোরআন হাদিসের আলোকে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রশ্নের প্রমাণভিত্তিক জবাব প্রদান করা হয়।

শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
এটি ঢাকার খিলক্ষেতের কুড়িল বিশ্বরোডের কুড়াতলি এলাকায় অবস্থিত একটি উচ্চতর ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালে আল্লামা তাকি উসমানির অন্যতম শাগরেদ, গবেষক আলেম মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ প্রতিষ্ঠানটির সূচনা করেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মত এখানেও একাধিক বিভাগ থাকার পরও এটি মূলত আধুনিক মাসায়েল ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের করণীয় সম্পর্কে সমকালীন যথার্থ ব্যাখ্যাদানের জন্য বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একাধিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া এখান থেকে প্রভূত প্রয়োজনীয় উন্নত ফিকহী রুচিবোধ সম্পন্ন গবেষণামূলক একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু প্রকাশিতব্য রয়েছে। বর্তমানে মারকাজটির কার্যক্রম একটি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে হলেও শীঘ্রই তা নিজস্ব স্থায়ী কার্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব কার্যক্রমে বর্ধমান উন্নতিতে সচেষ্ট ও যথার্থ সফল। কারণ এটি মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিষয়াবলিকে ইসলামিকরণে যথেষ্ট উদ্যোগী।

মদিনাতুল উলুম ঢাকা মাছনা মাদ্রাসা
মাদ্রাসাটির অবস্থান ঢাকার খিলক্ষেতের মোহাম্মদী হাউজিং-এ। প্রখ্যাত মুফতি মুহাম্মদ ইয়াহইয়া বিন ইরশাদ ২০১৭ সালে মাদ্রাসাটির সূচনা করেন। এর ইফতেতাহী মজলিসের জন্য দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা আলেমগণের পাশাপাশি বিশেষভাবে দারুল উলুম দেওবন্দের তৎকালীন শাইখুল হাদিস মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রাহিমাহুল্লাহকে দাওয়াত প্রদান করা হয়। মাদ্রাসাটির উচ্চতর ইসলামী আইন তথা ফিকহ গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, সেখানে উসুল মাফিক কার্যক্রম তথা ‘দ্য রুল অব ল’ এর প্রতি শিক্ষার্থী ও তাদের গবেষণায় মজবুত দৃষ্টি রাখা হয়। এজন্য আলাদাভাবে সেখানে শ্রমসাধ্য পাঠকার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর উপকারিতা হলো, আইন প্রতিস্থাপন এবং মান্য করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রামাণিক শক্তি ও যুক্তি পাওয়া যায়। সমসাময়িক ফিতনাসমূহ দূরীকরণের ক্ষেত্রে এটি ব্যাপক কার্যকর বলে পরিগণিত হয়েছে।

লেখক : শিক্ষার্থী ও প্রাবন্ধিক।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ