শুরু হয়েছে কওমি মাদরাসাগুলোর নতুন শিক্ষার্ষ। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে মাদরাসাগুলোকে ছাত্র হারিয়ে যাওয়া অথবা পালিয়ে যাওয়ার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেক সময়। চিন্তাগ্রস্থ হোন অভিভাবকরাও। ছাত্র হারিয়ে গেলে বা পালিয়ে গেলে করণীয় কী এ বিষয়ে প্রতিবেদন করেছেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ তামিম।।
মাদরাসা থেকে ছাত্র হারিয়ে গেলে বা পালিয়ে গেলে শিক্ষকদের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আবার অভিভাবকদেরও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে মাদরাসাকে। মাদরাসার শিক্ষকদের করণীয় হলো সর্বপ্রথম বিষয়টি হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর পরিবারকে জানানো। তাদের থেকে সহযোগিতা নেওয়া। অবশ্যই এ ধরণের ঘটনা যেনো না ঘটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে মাদরাসাগুলোকে।
মাদরাসাকে সি.সি ক্যামরার আওতায় আনা। সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা রাখা। সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদের নিয়ে থানায় জিডি করা। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেওয়া। বন্ধু থাকলে তাদের বাড়িতে গিয়েছে কী না দেখা। মাদরাসার আশ-পাশে কোনো স্টেশন থাকলে সেখানে খুঁকতে হবে। ট্রেন স্টেশন, বাস স্টেশন, নৌ বন্দর, যেটাই মাদরাসার পাশে থাকবে সেখানে খোঁজ করা। মানুষকে জিজ্ঞেস করা। হয়ত কেউ না কেউ তাকে দেখেছে।
অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। তাদের করণীয় হলো, চিন্তিত না হয়ে তাকে খুঁজে পেতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা। ছাত্রের পালানো অভ্যাস থাকলে ভর্তির সময়ই মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে জানানো।
মাদরাসা থেকে কেউ হারিয়ে গেলে বা পালিয়ে গেলে তাকে খুঁজে পেতে প্রাথমিক খোঁজাখুঁজির সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই আইনের আশ্রয় ভুলবেন না।
আইনি সহায়তা কিভাবে নিবেন
মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যদি পালিয়ে যায় বা হারিয়ে যায় তখন আইনি সহায়তা নেয়া খুবই প্রয়োজন। আইনি সহায়তা কেনো প্রয়োজন, কেনো আইনি সহায়তা নেয়া গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন ঝিনাইদহ জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুফতি ইলিয়াস আলমগীর।
তিনি বলেন, নানা কারণে অনেক সময়েই অনেকের আইনি সহায়তা নেয়ার দরকার হয়ে পড়ে। সাধারণ জিডি থেকে শুরু করে মামলা করা, আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু আইনগত জটিলতায় পড়ার আগে পর্যন্ত কীভাবে সহজে আইনের সহায়তা নেয়া যায়, কোন সহায়তার জন্য কোথায় যেতে হবে, সেই সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা থাকে না। ধারণা না থাকার কারণে কাজটা অনেক কঠিন মনে হয়।
সঠিক সময়ে যদি আমরা আইনি সহায়তা না নেই এটা আমাদের জীবনের বিপদ নিয়ে আসতে পারে। আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রাথমিক এবং সাধারণ একটি বিষয় হচ্ছে জেনারেল ডায়েরি বা জিডি।
বিশেষ করে কোন কিছু হারিয়ে গেলে, আইনগত রেকর্ড সংরক্ষণ বা পুলিশে প্রাথমিক তথ্য জানানোর জন্য সাধারণ ডায়েরি করা হয়ে থাকে।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের হারিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই আপনি থানায় জিডি করে ফেলবেন। আল্লাহ না করুন পরে যদি ছাত্রকে নাও পাওয়া যায়, তখন মাদরাসার উপর চাপ সৃষ্টি হবে না। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে নিকটস্থ থানায় একটি জিডি করতে হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মোঃ ওয়ালিদ হোসেন বলেন, জিডি সবসময়ে স্থানীয় থানায় করতে হয়। আপনার বাসা বা মাদরাসা যেখানেই হোক না কেন, যে এলাকা থেকে ছাত্র হারিয়ে গেছে বা ঘটনা যে এলাকায় ঘটেছে, সেখানকার স্থানীয় থানাতেই জিডি করতে হবে। অন্য কোন থানা জিডি নেবে না। জিডি করার পর পুলিশ আপনার সন্তানকে খুঁজে পেতে সহযোগিতা করবে।
আরো পড়ুন-‘ইফতা বিভাগ নিয়ন্ত্রণে বোর্ডগুলোকে খুব সতর্ক হতে হবে’
জিডি করবেন যেভাবে
জিডি অর্থ সাধারণ ডায়রি। এটা আপনার নিকটস্থ থানাতেই করতে হবে। এই ব্যাপারে অন্য কোন থানা আপনাকে সহায়তা করবে না। জিডি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ১৮ বছরের উর্ধ্বে হতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিক থানায় গিয়ে স্বাভাবিক ভাবে জিডি করতে পারবে। উল্লেখ্য যে জিডি করার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টাই প্রতিটি থানাতে জিডি গ্রহণ করা হয়। তাই যেকোনো সময়ই জিডি করতে পারবেন। তবে ঘটনা ঘটার পর যত দ্রুত সম্ভব জিডি করা উচিত। কারণ পরবর্তীতে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়ায় যেতে হলে জিডি করার সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে।
থানায় যাওয়ার পর দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে জিডি করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে। এরপর তাকে বিস্তারিত মৌখিক বিবরণ দিতে হবে। এ সময় তিনি কোনো প্রশ্ন করলে সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারাটা জরুরি। মৌখিক পর্বের পর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আপনাকে জিডি করার কাগজ এগিয়ে দেবেন। এতে আপনাকে মূলত একটি দরখাস্ত লিখতে হবে। লেখার আগে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিতে পারেন।
অনলাইনে জিডি করবেন যেভাবে
অনলাইনে জিডি করতে হলে প্রথমেই আপনাকে চলে যেতে হবে বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন জিডির সাইটঃ http://gd.police.gov.bd/ ।
অনলাইনে জিডি করতে আপনার প্রয়োজন হবে শুধু তিনটি জিনিসের। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, আপনার সচল মোবাইল নম্বর এবং আপনার জন্ম তারিখ। সাইটে ঢুকলেই প্রথম ধাপে এই তিনটি তথ্য দিয়ে ‘জমা দিন’ বাটনে ক্লিক করলেই পরবর্তী ধাপে চলে যাবেন। পরবর্তী ধাপে আপনার মোবাইল নম্বরে একটি কোড পাঠানো হবে।
আরো পড়ুন-হজের মৌসুমে অস্থায়ী কাজের সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসীরা
কোডটি সাইটে প্রবেশ করান। ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করার পর আপনাকে বেশ কিছু তথ্য প্রবেশ করাতে হবে। সব তথ্য দেয়া হলে সাবমিটে ক্লিক করে জিডি আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
-এটি