আজ এক ইফতা বিভাগের জিম্মাদার ওস্তাদগণের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম৷ সম্ভবত তাঁরা ছাত্রদের পড়াশোনার নেসাব নিয়ে পরামর্শ করতেছিলেন৷ হঠাৎ কানে বাজলো একজন বলতেছেন, ‘যাকারিয়া সাব, তকি সাব’৷ দুটি নামের উচ্চারণ আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ নামের আগে আদবিমূলক কোনো শব্দ নেই৷ আচ্ছা এটা বাদই দিলাম, একজন তো পরকালের বাসিন্দা৷
সাধারণ মুসলমানদের জন্যও তো রাহিমাহুল্লাহু তায়ালা বলে দোয়া করা বেঁচে থাকা মুসলমানদের কর্তব্য৷ এরমাঝে তিনি তো অসাধারণদের মধ্যে অসাধারণ ও অনন্য৷ আমরা তাঁদের জুতার ধুলির বরাবরও হতে পারিনি৷ ইলম, আমল, আখলাকে তাঁদের কাছে যাওয়া তো বহুত দূরের কথা!
আজকে শুনেছি তাই লিখছি বিষয়টি এমন নয়; বেশ কিছু বছর ধরেই ছাত্র এমনকি অনেক আসাতিজায়ে কেরামের মুখেও মুরব্বিদের নাম উচ্চারণে যতেষ্ট কমতি দেখা যায়৷ ছাত্রদের মুখেই তো আমাদের মুরব্বিদের নামের এমন উচ্চারণের কমতি মেনে নেওয়ার মতো না৷ সেক্ষেত্রে ছাত্ররা যাদের থেকে শিখবে, তাঁদেরই যদি মুরব্বিদের নামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এই দুরাবস্থা থাকে; তাহলে তো আফসোস আর অনুশোচনা করা ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকে না৷
আমাদের ওস্তাদগণের মুখ থেকে শুনেছি, তাঁরা নাকি নিজ ওস্তাদগণের নামই মুখে নিতেন না৷ উচ্চারণ করতেন না৷ এলাকার দিকে বা কোনো বিশেষ গুণের দিকে সম্বন্ধ করে ওস্তাদগণের পরিচয় দিতেন৷ যেমন, সদর সাহেব হুজুর, পিরজি হুজুর, সদর সাহেব হুজুর৷ মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর৷ পাহাড়পুরি হুজুর৷ কুমিল্লার হুজুর৷ ইমাম সাহেব হুজুর৷
এভাবে পরিচয় দিতেন নিজ ওস্তাদগণের৷ কিন্তু বর্তমানে ছাত্ররা নিজ ওস্তাদগণকে নাম বলেই পরিচয় দেয়৷ এখানেও দুঃখ ছিলো না৷ দুঃখ হলো, অনেক ছাত্র ভাইয়েরা উস্তাদগণের নামটিও সঠিক ভাবে উচ্চারণ করে না৷ অনেকেই নামই জানে না৷ এই হলো, ছাত্র ভাইদের অবস্থা!
বড়োরা নিজ ওস্তাদগণের নাম নেওয়াকে বেয়াদবি মনে করতেন৷ নাম নেওয়াতে ওস্তাদগণের অসম্মান হয় মনে করতেন৷ আমাদের মুহাদ্দিস সাহেব হুজুর (আল্লামা হেদায়াতুল্লাহ) রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কথা৷ হজরতের সামনে একবার একলোক সদর সাহেব রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার নামটি উচ্চারণ করে পরিচয় দিয়েছিলো৷ তিনি রাগ করেছিলেন৷ বলেছিলেন, ‘হুজুরের নাম নিতে হবে কেনো? সদর সাহেব হুজুর বললে এদেশে হুজুরকে চিনে না এমন কেউ আছে নাকি?’
হাকিমুল উম্মত, হজরত থানবি রাহিমাহুল্লাহু তায়ালার কথা৷ তিনি তাঁর জীবনের সবকিছুর অবিজ্ঞতার সমগ্র ‘মালফুজাতে হাকিমু উম্মত’ এ নিজ শায়খ ও মুর্শিদের কথা সময়ে সময়েই স্মৃতিচারণ করেছেন৷ কিন্তু সেখানে তিনি নামের পরিবর্তে ‘হাজি সাহেব হুজুর’ বলেই সম্বোধন করেছেন৷
আমাদের বড়োদের জীবনী চর্চা করলে তাঁদের মুরব্বিদের প্রতি এমন আদব আর ভক্তি-শ্রদ্ধার কথা আমরা পর্যাপ্ত জানতে পারবো৷
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বড়োদের পদাঙ্ক অনুসরণ-অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন৷ আদব-বিনয় দ্বারা আমাদেরকে সজ্জিত করে দিন৷ আমিন৷
লেখক: মুদাররিস, সংকলক, অনুবাদক