শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের সংগঠন হেফাজত: সিলেটে বাবুনগরী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করেছেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি সরকারকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, আপনারা আমাদের পরামর্শ মোতাবেক চলুন। জনগণের ও তৌহিদি জনতার মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। আমরা আপনাদের শত্রু নই।

আজ শনিবার (২১ নভেম্বর) সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট শাখার আয়োজনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

কাদিয়ানীরা সরকারের প্রধান শত্রু উল্লেখ করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, তারা শুধু আপনাদেরই শত্রু বা ইসলামেরই শত্রু নয়, তারা পুরো বাংলাদেশের শত্রু।

হেফাজতের জন্মের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা ইসলামের শত্রু তাদের কবর রচনা করার জন্য আসছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম গতানুগতিক কোন সংগঠন কিংবা সরকারদলীয় কোনো সংগঠন নয়। বরং হেফাজতে ইসলাম রাসূলের সা. ইজ্জত রক্ষার সংগঠন। গণমানুষের সংগঠন। বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের সংগঠন। তিনি বলেন, ২০০ কোটি মুসলমানের কলিজার টুকরা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেয়া হবে আর হেফাজত বসে থাকবে তা কখনো হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘সর্বপ্রথম সরকারিভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের পেয়ারা হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কটুক্তি করেছে ফ্রান্সের ম্যাক্রোঁ। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, হে নাস্তিক-মুরতাদরা, ইসলামের শত্রুরা তোমরা শুনে রাখো, বিশ্বের যেখানেই আমাদের রাসুলের কটাক্ষ করা হবে, সেখানেই কোটিকোটি আশেকে রাসুলের রক্তের বন্যা বয়ে যাবে।

কাদিয়ানীরা রাসূলের শত্রু উল্লেখ করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, রাসূলের আরেকটি বড় শত্রু হলো কাদিয়ানী ফেরকা। তিনি বলেন, কাদিয়ানীরা কাফের এতে কোন সন্দেহ নেই।

তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশ্বাস বর্ণনা করে বলেন, ‘আমি জানি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কাদিয়ানীদের মুসলমান বলে মনে করেন না। তবে ব্যক্তিগতভাবে কাদিয়ানীদের কাফের বললে হবে না। সংবিধানিক ভাবে, সরকারিভাবে তাদেরকে কাফের ঘোষণা করতে হবে।’

সারা বিশ্বের কোথায় কোথায় কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করা হয়েছে তার তালিকা উল্লেখ করে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, মিশর সরকার ১৯৭৭ সালে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করেছিল। সিরিয়া সরকার ১৮০০ সালে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করেছিল। ‘রাবেতাতুল আলম আল ইসলামী’র অধীনে সারা বিশ্বের ১০০ টার উপরে রাষ্ট্র রয়েছে-এই সকল রাষ্ট্র সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের কাফের ঘোষণা করেছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে আমার উস্তাদ আল্লামা ইউসুফ বিন্নূরী ও মুফতি মাহমুদ হাসান রহমাতুল্লাহ আলাইহির নেতৃত্বে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করেছিল। তাই ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা করতে কোন সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, হিন্দুরাও তো কাফের। কিন্তু তাদেরকে তো আপনারা রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের বলার জন্য সরকারকে কোন চাপ প্রয়োগ করেন না। তাহলে কাদিয়ানীরাও সেরকম ভাবেই কাফের থাকুক, তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাফের ঘোষনা দেয়ার কী প্রয়োজন পড়ল? এর জবাব হলো হিন্দুরা কাফের কিন্তু কখনো নিজেদের মুসলমান বলে পরিচয় দেয়না। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা ব্যবহার করেনা। তারা মসজিদ কিংবা মাদ্রাসায় যায় না। তারা মসজিদকে নিজেদের ধর্মীয় স্থান বলেও দাবি করে না। তারা মুসলমানের আজানও ব্যবহার করেনা। কিন্তু কাদিয়ানীরা কাফের হওয়ার পরেও মুসলমানদের নাম ব্যবহার করে। মুসলমানের পরিচয় ব্যবহার করে। আজান ব্যবহার করে। জুমার নামাজ পডড়ে। যার কারনে সরলমনা মুসলমানরা ধোকা খায়।

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে যারা আছি আমরা সবাই ভাই ভাই। আমরা সবাই হেফাজতের কর্মী।আমরা আওয়ামী লীগ করি না। আমরা না করি না বিএনপিও। তবে আমাদের লড়াই হলো আস্তিক-নাস্তিকের। ইসলাম বিদ্বেষীদের সাথে হল মুসলমানদের লড়াই। আমরা হলাম আস্তিক আর যারা ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে, আল্লাহ বিশ্বাস করে না। মানে না রাসূলকে। তারা হল নাস্তিক।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ রব্বুল আলামীনের বিধিবিধান কায়েম করা। আর নাস্তিক-মুরতাদ ও বেঈমানদের কবর রচনা করা।

সবশেষে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনার শত্রু নই। আমরা আপনার দুশমন নযই। বরং আপনার শত্রু ও আপনার দুশমন হল আপনার আশপাশে যে সকল নাস্তিকরা বসে আছে তারাই।

এতে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি শায়খ জিয়াউদ্দীন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ড. আহমদ আবদুল কাদের, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জী প্রমুখ।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর