শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বায়তুল মোকাররম গণজমায়েতে জাতীয় নেতারা কে কি বললেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: ধর্ষণ, সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ ও জিনা-ব্যাভিচার বন্ধের দাবিতে ৬দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণমিছিল করেছে সমমনা ইসলামী দলসমূহ।

আজ (শুক্রবার) ১৬ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমে সমমনা ইসলামি দলের ব্যানারে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। এতে বক্তব্য দেন দেশের রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ। নিচে কয়েকজনের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে কার্যকর করতে হবে: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী

দেশে ধর্ষণের মতো আর একটি ঘটনাও সংগঠিত হতে দেয়া হবে না। ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে কার্যকর করতে হবে। তিনি বলেন, একদিকে দেশ করোনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। অপরদিকে মা বোনদের আব্রু- ইজ্জত লুণ্ঠিত করা হচ্ছে। যেভাবে হায়েনার মতো তাদের আব্রু ইজ্জত শেষ করা হচ্ছে। তাদের হত্যা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি দেশে আর চলতে দেয়া যেতে পারে না। চলমান এ পরিস্থিতিতে আলেমসমাজ চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তাই তারা বাধ্য হয়েছেন মাঠে নামতে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, এদেশে ধর্ষণের মতো আর একটি ঘটনাও সংগঠিত হতে দেয়া হবে না। ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে কার্যকর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নবীদের শিক্ষা, ‘যখন তোমার লজ্জা চলে যাবে তখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে।’ লজ্জা-শরম-হায়া এটা হলো (স্টেয়ার) ব্র্যাক। এ স্টেয়ার যদি চলে যায় তাহলে জাতি ধ্বংষ হয়ে যায়। আজ এ ব্র্যাককে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি বিধায় সমাজে এ অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের জাতীয় সিলেবাস ও শিক্ষানীতির মাঝে পরিবর্তন আনতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে শিক্ষানীতিকে সাজাতে হবে। আমাদের মা-বোনদের কুরআন-সুন্নাহ যে অধিকার দিয়েছে সে অধিকার শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। এর পাশাপাশি জিনা-ভ্যাবিচার সহ সর্বপ্রকারের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু আইন করলেই চলবে না। আইনের প্রয়োগ করতে হবে। আর আইন হওয়া চাই ন্যায় বিচারের আইন। ন্যায় বিচারের আইন করতে হলে কুরআন-সুন্নাহর আইন এদেশে বাস্তবায়ন করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, সমমনা ইসলামী দল এদেশের তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ধর্ষণ ও জেনা-ব্যভিচার প্রতিরোধে সমমনা ইসলামী দলসমূহের ৬ দফা দাবীতে গণমিছিল শেষে বিশাল সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আইনে জিনা-ব্যভিচার সম্পর্কে কোন কথা বলা হয়নি: ড. মোহাম্মদ ঈশা সাহেদী

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মোহাম্মদ ঈশা সাহেদী বলেন, সারাদেশে যখন জেনা-ব্যভিচারের উৎসব চলছিলো সরকার তখন নিরব ছিলো। কিন্তু সারাদেশে মানুষ ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলো তখন ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আইন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে জেনা ব্যভিচার সম্পর্কে কোন কথা বলা হয়নি। যদিও কুরআনে জেনা-ব্যভিচারের কটিন শাস্তি ঘোষনা করা হয়েছে। সরকারের আইনে জনগণ সন্তুষ্ট নয়। জেনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করতে হবে।

আজকের গণমিছিল প্রমান করে ৬ দফা দাবি সরকারকে মানতে হবে: মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, সমমনা দলসমূহের আজকের গণমিছিল প্রমান করে ধর্ষণ ও জেনা-ব্যভিচার প্রতিরোধে সমমনা ইসলামী দলসমূহের ৬ দফা দাবী সরকারকে মানতে হবে।

সমমনা দল ঘোষিত দফাগুলো হচ্ছে- ১। যিনা, ব্যাভিচার ও ধর্ষণ প্রতিরোধে জনসম্মুখে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২। পর্ণোগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩। মাদকদ্রব্যের অবাধ প্রাপ্তি ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৪। নারীর অশ্লীল উপস্থাপনা ও পণ্য হিসাবে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ৫। আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ এবং বিচার কাজকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে হবে। ৬। নারীর মর্যাদা এবং অধিকার সংরক্ষণে কুরআন-হাদীসের শিক্ষাসমূহ জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সুষ্ঠ আন্দোলনের ভাষা বুঝতে অক্ষম হলে বাঁকা পথে হাঁটতে বাধ্য হবো: মাওলানা মামুনুল হক।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেন, সুষ্ঠ আন্দোলনের ভাষা সরকার যদি বুঝতে অক্ষম হয় তাহলে আমরা বাঁকা পথে হাঁটতে বাধ্য হবো। তিনি বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কার্যকারী আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। ধর্ষণের সহায়ক সমস্ত অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করতে হবে।ধর্মের উপর বা ধর্মীয় বিধানের উপর আঘাত আর মেনে নেয়া হবে না। আমাদের সহ্য সীমা অতিক্রম হয়ে গেছে। টিভির পর্দায় নোংরা মানসিকতার প্রচার আর দেখতে চাই না আমরা।

তিনি আরও বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট বাংলাদেশে ইসলামী সাংস্কৃতি চলবে। স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে অপসাংস্কৃতি মেনে নেয়া হবে না।নারীদের অশ্লিল পোষাকে বিজ্ঞাপনের বস্তু বানানো চলবে না। সরকারি আদেশে সিনেমা হল চালু করে দেয়া হয়, অথচ ওয়াজ মাহফিলের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি মিলে না। উল্টো মাহফিলগুলো বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসমস্ত পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার জন্য তৌহিদী জনতা সর্বদা প্রস্তুত। প্রশাসন সব ইস্যুতে নীরব থাকলে চলবে না। তাদের কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব মেনে নেয়া হবে না।

করোনভাইরাসের মত সারাদেশে ধর্ষণের মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে: ড. আহমদ আব্দুল কাদের

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনভাইরাসের মত সারাদেশে ধর্ষণের মহামারি ছড়িয়ে পরেছে। ধর্ষণ বন্ধে শুধু মৃত্যুদন্ডের আইন করলেই হবে না, তার সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। বিচার দ্রুত করতে হবে। বেয়াপনা, পর্ণগ্রাফি, মাদকদ্রব্যের সয়লাব বন্ধ করতে হবে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে।

আজ ১৬ অক্টোবর বাদ জুম্মা বিজয়নগর সড়কে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মোহাম্মদ ঈশা সাহেদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, মুসলিম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদ মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার সম্পাদক মাওলানা ফয়সল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেমে আরো বক্তব্য রাখে জমিয়তে উলামায়ে ইসালাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানাা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা তোফাজ্জল হোসনে মিয়াজী, মাওলানা আজিজুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা এনামুল হক মুসা, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব ড. মোস্তফা তারেকুল হাসান, খেলাফত আন্দোলনের সহকারী মহাসিচব মাওলানা ফিরোজ আশরাফী প্রমুখ।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর