শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


রুহানি সাহাবা নিয়ে কী বলছেন আলেমরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ: সম্প্রতি জাতীয় ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরবের গাওয়া ‘রুহানি সাহাবা’ শিরোনামে একটি সংগীত বিষয়ে আলোচনায় আসে ‘রুহানী সাহাবা’ শব্দটি। এ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ বিতর্ক হচ্ছে।

সাহাবা রাদিআল্লাহু আনহুম। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সোহবাতপ্রাপ্ত জান্নাতি মানুষের দল। যারা দুনিয়ায় থেকেই পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ। জান্নাতি সুসংবাদ পেয়েছেন এমন দশজন সাহাবীকে বলা হয় আশারায়ে মুবাশশিরাহ।

এছাড়া সকল সাহাবীদের ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার সাহাবীরা তারকাতুল্য। তোমরা সাহাবাদের থেকে যাকেই অনুসরণ করবে নাজাতপ্রাপ্ত হবে। এ সাহাবী হওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত রয়েছে। যদি সেসব শর্ত পাওয়া যায় তাহলেই তিনি হতে পারেন সাহাবী। সাহাবাদের গুণাবলির মাঝে অন্যতম হলো ঈমান নিয়ে প্রিয় নবীর সোহবাতপ্রাপ্ত হওয়া ও ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করা। যদি আর কোনো গুণ নাও থাকে শুধু এই একটি গুণ থাকে তাহলেই তিনি সাহাবী হওয়ার মর্যাদা পাবেন। আর যদি এইগুণ ছাড়া আরও অনেক গুণে গুনান্বিত হোন তবুও তিনি সাহাবীর মর্যাদা পাবেন না।

শব্দটি নিয়ে আওয়ার ইসলামের সাথে কথা বলেছেন, শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘রুহানি সাহাবা’ শব্দের ব্যবহারের কোনো সুযোগ ইসলামি শরিয়তে নেই। শরিয়তে যাদেরকে সাহাবি বলা হয় তারা নির্দিষ্ট রয়েছেন। আলাদা করে রুহানি সাহাবা পরিভাষা ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। সাহাবি এবং নবীর (স.) বিষয়টি ইসলামের নির্দিষ্ট পরিভাষা। তাই নতুন করে কেউ এসে রুহানি সাহাবা বা রুহানি নবী হতে পারবে না।

এ নিয়ে কথা বলেছেন, জামিয়া রাহমানিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার মাওলানা মামুনুল হক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রুহানি সাহাবা’ এমন কোনো পরিভাষা ইসলামী শরীয়তের মধ্যে নেই। সাহাবী সাহাবীই। কেননা যে ঈমান নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন অথবা নবীজি তাঁকে দেখেছেন। তাঁর মৃত্যুও হয়েছে ইমান অবস্থায়। সেই শুধুমাত্র সাহাবী। তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে সাহাবী বলা যাবে না। আর ‘রুহানি সাহাবা’ নামে ইসলামে কোনো পরিভাষাই নেই।

শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ আরও বলেন-‘এমনকি আভিধানিক অর্থ নিয়েও অন্য কারো কাউকে ‘রুহানি সাহাবা’ বলা যাবে না। বরং এটি হলো ইসলামের একটি খাস পরিভাষা। এই পরিভাষাকে বর্তমানে হাজার বছর পরে এসে এটার রূপক অর্থ নিয়ে বা অপ্রকাশ্য কোন অর্থ নিয়ে যদি এটাকে ব্যবহার করা হয় তাহলে আমার খেয়াল মতে, এবং আমার অনুসন্ধান মতে, আমার জানামতে এটি সাহাবাদের শানে গোস্তাখি বা বেয়াদবি করার সমতুল্য বিষয় হবে। তাই এটা বলা কোনভাবেই সঠিক নয় এবং এটি বলাও উচিত নয়। বরং এটা বলা যায়। আমরাতো সাহাবায়ে কেরামের গোলামের গোলামের গোলামের সমতূল্যও নই। সেখানে রুহানি সাহাবা কিভাবে হতে পারি।

তিনি বলেন, ‘এই শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে কেউ কেউ বুঝতে পারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যারা দেখেছেন তারা হলো ‘জিসমানী সাহাবি’ এবং এখন যাদেরকে বলা হচ্ছে তারা হল ‘রুহানি সাহাবি’। বরং চিন্তা করলে দেখা যায় ‘রুহানি সাহাবি’ জিসমানি সাহাবিদের থেকেও অনেক ক্ষেত্রে বড়। তাই এই শব্দ ব্যবহারের কারণে সাহাবায়ে কেরামদের আজমত এবং বরত্বের মধ্যে একটি দাগ লেগে যাবে। এমনকি যাদেরকে রুহানি সাহাবী বলা হবে তাদের সম্মান ও সাহাবায়ে কেরামের কাছাকাছি উঠে যাবে।’

তিনি বলেন, ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুহানি সন্তান হওয়ার মত কাজ করো। তিনি পবিত্র কোরআনের সুরা আহযাবের ৬ নয় আয়াতের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন কোরআন শরীফে রয়েছে-‘নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা। [সূরা আহযাব-৬]

এই আয়াত হিসেবে নবীর স্ত্রীরা যদি আমাদের মা হন তাহলে নবী হবেন আমাদের পিতা এবং তিনি পবিত্র কোরআনের এই আয়াতের ব্যাখ্যার বিষয়ে কিরআতে সাযযার ‘কিরআতে ইবনে আব্বাস’ এর মধ্যে নবী আমার আমাদের পিতা হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট উল্যেখ থাকার কথা বলে বলেন – কিরআকে ইবনে আব্বাসের মধ্যে উল্যেখ আছে, ‘ও হুয়া আবুন লাহুম’ অর্থাৎ নবী স. আমাদের পিতা। এ বিষয়টি স্পষ্ট করে তিনি বলেন এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম আমাদের পিতা’। একই সাথে তিনি আবু দাউদ শরীফের হাদিস উল্লেখ করে বলেন আবু দাউদ শরীফে এমন একটি হাদীস রয়েছে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদের পিতা হিসেবে উল্যেখ করা হয়েছে।

এই আয়াত হিসেবে আমরা আমাদেরকে সরাসরি নবীর রুহানি সন্তান বলতে পারি। এবং এর সাথে মিলিয়ে সাহাবীদেরও রুহানি সন্তান হিসেবে কাউকে যদি বলা হয় তাহলে হয়তো শরীয়তে কিছুটা অবকাশ রয়েছে কিন্তু সন্তান না বলে সরাসরি ‘রুহানি সাহাবা’ বলা এটা গ্রহণযোগ্য নয় বরং রুহানি সাহাবী বিষয়টিও কেবলমাত্র সাহাবীদের গুন হিসেবেই রয়েছে। তাই এখানে অন্য কাউকে রুহানি সাহাবা বলা মানে নিজেদেরকে সাহাবির স্থানে নিয়ে যাওয়া হলো। তাই এটির অর্থই ভুল। এই শব্দের ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই।’

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর