শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


আপোষকামিতা নয়; সাথীদের শান্তিপ্রিয় সহঅবস্থান চান তাবলিগের মুরুব্বিরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আফফান
মফস্বল সম্পাদক>

১৯২৬ সালে হযরতজি মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর হাত ধরে তাবলিগ জামাতের পথচলা। ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ প্রচার, মানুষের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়ার কাজে নিবেদিত তাবলিগ জামাতের অনুসারী, অনুগামী ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ। তাবলিগের শুরু থেকেই আলেম ও তাবলিগের সাধারণ সাথীরা এ কাজ পরিচালনা করে আসছেন। তাবলিগের কাজ বাংলাদেশে খুব সুন্দরভাবেই চলছিলো। সবার মাঝে সে কি হৃদ্যতা। কী অপার ভালবাসা। একপ্লেটে খাবার। একসাথে থাকা। দলবেঁধে কাজ করা। সবই মোহিত করছিলো সাধারণ মানুষকে। কিন্তু হঠাৎই এ সুন্দর প্রাণচঞ্চল তাবলিগে নেমে আসে অস্থিরতা। তাবলিগের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আক্বিদা ও কিছু বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের কারণে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ, বিশৃঙ্খলা ও বির্তক শুরু হয়। তাবলিগের দ্বন্দ প্রকাশ্য দুভাগে রূপ নেয়। শুরু হয় প্রভাব ও ক্ষমতা বিস্তারের।

আজ দেশের প্রায় সব মসজিদেই দু দল কাজ করছে। কোথাও কোথাও ভিন্নচিত্রও আছে। তবে তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বিদের মতামত হলো আকিদা বিশ্বাস কিংবা ভিন্নমতের সঙ্গে আপোষকামিতা নয়; তবে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান নিশ্চিত করতে চান মুরব্বিরা।

উভয়পক্ষের সাথীরা শান্তিপ্রিয় সহাবস্থানে থেকে কাজ করার বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সাথে কথা বলেন তাবলিগের মুরব্বি, ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক জামে মসজিদের খতিব মুফতি আমানুল হক

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাবলিগের সাথীদের শান্তিপ্রিয় সহঅবস্থান নিশ্চিত করতে চাই। মুরব্বিদের পরামর্শ হলো- নিজেদের কাজে মনোযোগ দেয়া, দ্বায়িত্বের সঙ্গে মসজিদভিত্তিক ৪ কাজ করে যাওয়া। মাশওয়ারা, তালিম, গাশত ও খুরুজে মশগুল থাকা।

তিনি আরও বলেন, করোনা সঙ্কট ও তাবলিগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দের কারণে মূল কাজের মধ্যে বেশ ব্যাঘাত ঘটেছে। মুরব্বিদের মাশওয়ারা হলো- নিজের কাজের মেহনত বাড়ানো, সব রকমের বির্তক এড়িয়ে যাওয়া এবং কাউকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে চার কাজে মনোযোগী হওয়া।

তাবলিগের এই শীর্ষ মুরব্বি বলেন, হক চিনা, হক জানা এবং হকের ওপর অটল থাকার চেষ্টা করা। আল্লাহর কাছে দোয়া করা, নিজের দীনি লাইন নিরাপদ রাখতে আলেম-ওলামার সঙ্গে থাকা।

তিনি বলেন, তাদেরকে সাদিয়ানী বা এতায়াতি না বলা। সাদিয়ানী বললে তারা কষ্ট পায়, আমার জবান যেনো কারো কষ্টের কারণ না হয়। আর এতায়াতি বললে এতায়াত শব্দের ওপর জুলুম হয়, শব্দের ভুল ব্যবহার হয়। তাই যারা মাশওয়ারাভিত্তিক চলছে তাদের শুরাই নেজাম আর অন্যদের শখসি নেজামের ওপর চলছে বলা যায়।

মুফতি আমানুল হক মুরব্বিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের ইতিহাস মাইর খাওয়ার, মাইর দেওয়ার না। টঙ্গি এজতেমার ময়দান থেকে ভাটারা মাদরাসা পর্যন্ত আমাদের সাথীরা মাইর খেয়েছে। আমাদের কোন সাথীর বলা-কওয়া, আচার-আচরণ ও কাজের মাধ্যমে যেনো কোন সাথী কষ্ট না পায়। সারা দেশের সাথীরা যেনো মিল মহাব্বতে কাজ করতে পারে।

তাবলিগের একাংশের মুরব্বি, সাভার মারকাজুল উলুমুশ শরিয়ার মুহতামিম মাওলানা জিয়া বিন কাসেম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তাবলিগের উভয় পক্ষের সাথীরা যদি কয়েকটি বিষয় মেনে চলে তাহলে শান্তিপ্রিয় সহাবস্থানে থেকে দীনি দাওয়াতের কাজ করা যাবে।

এক. যে মসজিদে আমল আছে সেখানে তারা এক নামাজে আমল করল; আমরা আরেক নামাজে করলাম।
দুই. তারা একদিন গাশত করলো, আমরা আরেক দিন গাশত করলাম।
তিন. যে জামাত আগে মসজিদে যাবে তারা সেখানে করল, অন্যরা পাশের মসজিদে করল।
চার. বিদেশি জামাতের ক্ষেত্রেও এমনটা করা যায়। আমাদের মেহমানরা আমাদের দাওয়াতে আসবে, তাদের মেহমানরা তাদের দাওয়াতে আসবে।

এভাবে সবগুলো বিষয় যদি আমরা করি তাহলে আশা করি কোন সমস্যা হবে না। তারাও আল্লাহর জন্য তাবলিগ করুক। মানুষকে দীনের দিকে ডাকুক। আমরাও আল্লাহর জন্য তাবলিগ করি, মানুষকে দীনের দিকে ডাকি। তাই উভয়ে দ্বন্দে না জড়িয়ে নিজেদের কাজ করা এবং মানুষকে দীনের পথে ডাকা।

এ বিষয়ে জামিয়া রাহমানিয়ার ফতোয়া বিভাগে প্রধান, মুফতি হিফজুর রহমান বলেন, ‘মসজিদে সর্বস্তরের লোক যায়। যারা মসজিদে তাবলিগ করে, মসজিদে তারা যদি পরস্পরের মধ্যে হাঙ্গামা করে সাধারণ লোকদের জন্য এটা সমস্যা হয়ে দেখা দিবে। এটা ইসলামের ক্ষতি, বিশেষ করে দাওয়াত ও তাবলিগের ক্ষতি। সাধারণ মানুষের দাওয়াত ও তাবলিগের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হবে। তাই মসজিদভিত্তিক ঝগড়া না হয়ে নিজেদের মধ্যে কম্প্রমাইজের ভিত্তিতে কাজ করা যেতে পারে। এই বেলা এক পক্ষ করল অন্য বেলা আরেক পক্ষ করলো। একই বেলা, একই নামাজের পরে উভয় পক্ষ কাজ করাটা দৃষ্টিকটু। সাধারণ মানুষের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। নিজেদের মধ্যে যে দ্বন্দ আছে সেটা নিজেদের মধ্যে থাকলো। সাধারণ মানুষ, অন্তত যারা মসজিদে আসে তাদের দৃষ্টিতে এটা দৃষ্টিকটু হবে না। আলেম-ওলামা, দাওয়াত ও তাবলিগের ওপর মানুষের খারাপ ধারণা, বিশ্বাসের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে না।’

তিনি বলেন, যেসব মাসয়ালা বা বক্তব্যে দ্বিমত আছে সেগুলো ক্ষেত্রে বিশেষ সাধারণ মানুষের কাছে বলা প্রয়োজন। আলেমরা কতগুলো মাসয়ালা-মাসায়েল, আকিদার বিরোধিতা করছে এটা সাধারণ মানুষকে অবিহিত করা প্রয়োজন। এটা যদি সর্ব সাধারণ না জানে তাহলে তারাও বিভ্রান্ত হবে। সুতরাং সেভাবে চিন্তা-ভাবনা করে সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য মাঝে মাঝে মজলিসের আয়োজন করা উচিত। এটা আলেমদের কর্তব্য। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে সাধারণ মানুষের মাঝে যেন বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। সেদিকে খুব বেশি গুরুত্বের সাথে লক্ষ রাখতে হবে।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ