শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ আহমাদ ইয়াসিনের স্ত্রীর ইন্তেকাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বেলায়েত হুসাইন

ফিলিস্তিনের ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ আহমাদ ইয়াসিনের স্ত্রী হালিমা ইয়াসিন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিকেলে দীর্ঘদিন নানা অসুস্থতায় ভুগে তার ইন্তেকাল হয়। এসময় তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি তিন পুত্র ও আট কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত রেখে গেছেন।

শহীদ আহমাদ ইয়াসিনের ভাতিজা নাসিম ইয়াসিন গণমাধ্যমকে তার চাচীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।

এদিকে হালিমা ইয়াসিনের ইন্তেকালে গভীর শোক জানিয়ে হামাস একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, 'আল্লাহর ফায়সালা ও ক্ষমতার ওপর সন্তুষ্টি জানিয়ে হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ ফিলিস্তিনি জনগণ, আরবি ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে হাজি ও মুজাহিদা হালিমা ইয়াসিনের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।

শোকবার্তায় ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, হালিমা ইয়াসিন তার স্বামী আহমাদ ইয়াসিন যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন তার যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন, অত্যন্ত ত্যাগ, ধৈর্য ও দান-অনুদানে মহীয়সী এই নারীর জীবন পরিপূর্ণ ছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীলতার সঙ্গে শায়খ আহমাদ ইয়াসিনের জীবনসঙ্গিনীর দায়িত্ব পালন করেছেন, শায়খের জীবনজুড়ে জিহাদ ও দাওয়াতের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। সর্বোপরি, শায়খের বন্দিজীবন ও শাহাদাতের পর দীর্ঘ সময় তিনি খুব সাহসিকতা ও ধৈর্য নিয়ে জীবনযাপন করেছেন। মহান আল্লাহ তার প্রতি অনুগ্রহ করুন। আমিন।

মুজাহিদা হালিমা ইয়াসিনের ইন্তেকালে বিশেষত মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে; অনেক বড় বড় ইসলামি ব্যক্তিত্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, শায়খ আহমাদ ইয়াসিন হলেন একজন বিশিষ্ট ইসলামী ব্যক্তিত্ব, ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ, ফিলিস্তিনের শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক ও ধর্মীয় নেতা। তিনি গাযা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফিলিস্তিনের ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস নামক স্বশস্ত্র রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা।

কর্মজীবনে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। এছাড়া, তিনি মসজিদে ইমামতি করেতেন এবং খুতবাও দিতেন। তার বলিষ্ঠ যুক্তি এবং উপস্থাপনভঙ্গী তাকে ফিলিস্তিনের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল।

১৯৬৭ সালের আরব ইসরায়েল যুদ্ধের পর শায়খ তার বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধের দিকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন। তিনি এসময় ইসলামী সমাজ সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে অবরুদ্ধ জনগন, আহত এবং বন্দীদের জন্য ত্রাণ ও সাহায্যের ব্যবস্থা করেন।

বিভিন্ন সামাজিক কাজের মাধ্যমে তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রিয় পাত্রে পরিণত হন। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথমবারের মত গ্রেফতার হন এবং ইহুদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণে জনগণকে উস্কানী দেয়ার অভিযোগে তার ১৩ বছরের জেল হয়। ১৯৮৫ সালে তিনি ছাড়া পান।১৯৮৭ সালে তিনি হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম দিকে হাসপাতাল, এনজিও, স্কুল, লাইব্রেরী গঠনের মাধ্যমে জনগনের মন আকর্ষণ করলেও ধীরে ধীরে হামাস ইসরাইলীদের বিরুদ্ধে একটি স্বশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ নেয়।

১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মত গ্রেফতার হন।১৯৯৭ সালে ছাড়া পেয়ে দ্বিগুন উদ্যমে প্রতিরোধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাকে হত্যার জন্য ইসরায়েল বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে ২২ মার্চ ২০০৪ সালের ভোরে ফজরের নামাজে যাবার সময় ইসরাইলী বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে মিসাইল ছুঁড়ে তাকে হত্যা করে। তার জানাজায় বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিনি জনগনের সমাগম হয়। বিশ্বের অনেক দেশ এবং অনেক সংগঠন তার হত্যাকান্ডের নিন্দা জানায়।

সূত্র: আল জাজিরা মুবাশির ও উইকিপিডিয়া

-এটি


সম্পর্কিত খবর