শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


হাটহাজারী মাদরাসার নতুন কাণ্ডারী কে এই আল্লামা শেখ আহমদ?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ আফফান।।

গত ১৭ জুন বুধবার উপমহাদেশের অন্যতম শীর্ষ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারীর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি মজলিসে শুরার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে তিনটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এর অন্যতম ছিল, দারুল উলূম হাটহাজারীর সহযোগী পরিচালক পদ থেকে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরিয়ে আল্লামা শেখ আহমদকে স্থলাভিষিক্ত করা।

তরুণ আলেম ও ছাত্রসমাজ বিষয়টির সমালোচনা করলেও আল্লামা শেখ আহমদকে ওই পদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি সুচিন্তিত ও উত্তম সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন অনেক প্রবীণ আলেমগণ।

কিন্তু কে এই আল্লামা শেখ আহমদ? তাঁর সম্পর্কে জানতে কথা হয় ক'জন প্রবীণ আলেমের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, আল্লামা শেখ আহমদকে হয়তো বর্তমান ছাত্ররা কম চিনতে পারে। কারণ তিনি এক যুগের বেশি সময় ধরে হাটহাজারী মাদরাসায় পড়াননি। কিন্তু নব্বইয়ের দশক ও শূন্য দশকের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন হাটহাজারী মাদরাসার দরসে হাদিসের সম্রাট। তাঁর কাছে হাদিস পড়া ছিল তখনকার ছাত্রদের অন্যতম স্বপ্ন। তাঁর মেধা ও স্মরণশক্তি ঈর্ষণীয়। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তালিমাত, বোডিংসহ জামেয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, আল্লামা আহমদ শফীর খুবই আস্থাভাজন ব্যক্তি আল্লামা শেখ আহমদ। আল্লামা বাবুনগরী হাটহাজারী নিয়োগের আগে শফী সাহেবের পরে শেখ আহমদকেই পরবর্তী মুহতামিম মনে করা হতো। তখন সেটা প্রসিদ্ধ ছিল। মাদরাসা ও ব্যক্তিগত প্রায় সব কাজেই তিনি আল্লামা শফীর সহযোগী ছিলেন। হয়তো আল্লামা শফী তাঁর সবচেয়ে আস্থাভাজন ব্যক্তির হাতেই আমানত রেখে যেতে চেয়েছেন।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আল্লামা শেখ আহমদ দেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে চট্টগ্রামের উল্লেখযোগ্য অনেক কওমি মাদরাসার শূরা সদস্য (পরিচালনা কমিটির সদস্য) এবং শীর্ষ আলেমদের শিক্ষক।

এমনকি তিনি হাটহাজারী মাদরাসার বর্তমান চাকরিরত দু-তৃতীয়াংশ শিক্ষকদের শিক্ষক। তিনি আল্লামা আহমদ শফীর বিশেষ খলিফা।

এক নজরে আল্লামা শেখ আহমদ
আল্লামা শেখ আহমদ ১৯৫০ সালে হাটহাজারীর দক্ষিণ মীরেরখিল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শুরু থেকে দাওরা পর্যন্ত তিনি দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা শেষ করে হাটহাজারী মাদরাসাতেই তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়। দীর্ঘকাল তিনি হাটহাজারীতে দরস দেন। প্রসিদ্ধ আছে, তিনি পড়াননি সিলেবাসে এমন কোনো কিতাব নেই।

২০০৪ সালে কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই থাকে হাটহাজারী ছাড়তে হয়।

এরপর ২০০৪ সালে জামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুরে শায়খুল হাদিস হিসেবে পাঠদান করেন। সর্বশেষ গত তিন বছর আগে তাকে পুনরায় হাটহাজারী মাদরাসায় নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে তিরমিজি শরিফ এবং বাবুনগরীর পাশাপাশি বুখারি শরিফের এক তৃতীয়াংশ পাঠদান করে আসছেন।

আল্লামা শেখ আহমদের ছাত্রবৃন্দ

ঢাকা ফরিদাবাদ মাদরাসার পরিচালক ও শায়খুল হাদিস, বেফাকের বর্তমান মহাসচিব আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস। ঢাকা শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিচার্স সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান মুফতি মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ।

জামেয়া রাহমানিয়া ঢাকার প্রধান মুফতি, মুফতি হিফজুর রহমান। মাওলানা আজিজুল হক্ব আল মাদানী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া দারুল আরকাম মাদরাসার পরিচালক মাওলানা সাজিদুর রহমান। দারুল উলূম হাটহাজারীর সিনিয়র মুফতি, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ।

দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহাদ্দিস, মাওলানা ওমর মেখলী। দারুল উলূম হাটহাজারীর মুফতি ও মুহাদ্দিস, মুফতি জসিম উদ্দীন। দারুল উলূম হাটহাজারীর সিনিয়র শিক্ষক, মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমী। নাজিরহাট বড় মাদসার মুহাদ্দিস ও নায়েবে মুহতামিম, মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী।

তার রচিত গ্রন্থাবলী : ১- تنظيم المخزون لأسماء العلوم والفنون ২- اصول حديث مع اصول تفسير ৩- قرآنى معلومات ৪- تنظيم الدراية فى الاحاديث الموضوعة ৫- تقرير ابوداؤد ৬- تقرير ترمذى ৭- منهاج البارى شرح بخارى جـ ১-২ ৮- ضياء البردة شرح قصيدة بردة

তাসাউফ তথা আধ্যাত্মিক পরিচয়

আল্লামা শেখ আহমদ মুফতিয়ে আজম, মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ. এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ.-এর ইন্তেকালের পর মাওলানা হাফিজুর রহমান (প্রকাশ পীর সাহেব) হুজুরের হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। যিনি কুতুবে আলম আল্লামা জমীর উদ্দীন রহ. এর খলিফা ছিলেন।

আল্লামা জমীর উদ্দীন সাহেব রহ. ইমাম রব্বানী রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. এর খলিফা ছিলেন। কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পীর সাহেব হুজুর রহ. আল্লামা শেখ আহমদকে খেলাফত প্রদান করেন। তারপর দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহতামিম আল্লামা শাহ আহমদ শফী এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভ। এছাড়া আল্লামা নোমান সাহেব পটিয়াভী রহ. থেকেও খেলাফত অর্জন করেন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর