বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ফটোল্যাব অ্যাপ: শরীয়াহ কী বলে?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি জামিল মাসরূর ।।

ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকের প্রোফাইলে ফটোল্যাব আপ ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানে প্রোফাইলের ছবিটিকে অনেকাংশে সাপের আকৃতিতে দেখানো হচ্ছে। অ্যাপটি স্বাভাবিকভাবে নিয়ে কিংবা ধর্মীয় বিধান না জেনেই ব্যবহার করছে অনেক ফেসবুক ইউজার। তারা এতে আনন্দবোধ করছে। একে অপরকে তৈরি করে উপহারও দিচ্ছে। ভাবা হচ্ছে এটা নতুন ডিজাইন। দেখাদেখি অন্যান্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে।

আরো দুঃখজনক হলো, দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি পরিহিত অনেককেও এমনটা করতে দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা-সমালোচনা পরিলক্ষিত হয়েছে।
শরীয়াহ সচেতন অনেকে এ ব্যাপারে পোস্টও করেছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছে করেছি।

এক. যেকোন প্রাণীর সাধারণ ছবিও প্রয়োজন ছাড়া তোলা বা অংকন করা উচিৎ নয়। কেননা ছবি সম্পর্কে হাদীসে কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত আছে: أشد العذاب يوم القيامة المصورون “কিয়ামতের দিন সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।" (মুসলিম হা. ২১০৯)
তাই সবারই অযথা, অপ্রয়োজনীয় ছবি ও সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকা দরকার।

দুই. এতে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি মানুষের সুন্দর অবয়বকে অজান্তে বিকৃত করা হচ্ছে। যা অনেকটা ব্যঙ্গ করার মতো। তা কখনো সুস্থ রুচিশীল মানুষের পছন্দ হতে পারে না। আর অবয়ব বিকৃতি বা "তাগঈরে খালকিল্লাহ" আল্লাহ প্রদত্ত আকৃতিকে পরিবর্তন করা মারাত্মক গোনাহের কাজ।

বিষয়টি এমন যে পরোক্ষভাবে যেনো আল্লাহর দেয়া সুন্দর, আকর্ষণীয় চেহারা ও শরীরকে অপছন্দ করা হচ্ছে। তাতে কিছু ঘাটতি রয়েছে। এখন তাকে সাপের লোগোতে পূর্ণ করতে হবে বা সুন্দর ও পছন্দনীয় করা হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ আল্লাহ পাক কুরআনের সূরা তীনে কসম খেয়ে বলেছেন: «لقد خلقنا الإنسان في أحسن تقويم» “আমি মানুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি”। সূরা তীন : ৪

কিছু ভাই না জেনে, দেখাদেখি এই উত্তম গঠনকে পরিবর্তন করছেন। অথচ আকৃতি পরিবর্তন করা ও সৃষ্টিগত অবয়বকে বিকৃত করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অভিসম্পাতের কারণ। যেমন হাদীসে এসেছে:
لعن الله ورسوله الواشمات والمستوشمات.....والمغيرات خلق الله

তিন. শয়তানের সবচে প্রিয় হলো সাপের আকৃতি । আর আমরা মুসলমান হয়ে তা গ্রহণ করছি এবং পছন্দ করছি। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।

চার. মানুষের আকৃতিকে কার্টুন বানানো ইসলামী শরীয়ায় ঘৃণিত কাজ। এছাড়াও রুচিশীল ব্যক্তিদের কাছেও এসব অস্বস্তিকর ও বেমানান।

পাঁচ. মানুষের সুন্দর চেহারাকে মূর্তি বা ভাস্কর্যের মতো বানানো চরম আপত্তিকর বিষয়। যা অনেকটা বস্ত্রালয়ের সামনে দাঁড়ানো পুতুলের ন্যায় মনে হচ্ছে। পার্থক্য শুধু অনলাইন আর অফলাইন। যা কোনো মুসলমানের জন্য শোভা পায় না।

মনে রাখতে হবে, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। পরিচিতি ও আদর্শ রয়েছে। বিজাতীয় যেকোনো কিছুকেই চিন্তা-ভাবনা ব্যতিত পছন্দ ও গ্রহণ করা উচিত নয়। এছাড়া বহু কারণে এই কার্টুন, জলচাপ, বিকৃতি করা থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরী। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অবয়ব বিকৃতি থেকে হেফাজত করুন, আমীন!

লেখক: উস্তাদ, মাহাদুশ শায়খ ইলিয়াস রহ. যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ