শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


বাজেটে কোরআনের উদ্ধৃতি ও একটি আলোকিত সকালের প্রত্যাশা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জহির উদ্দিন বাবর।।

জাতীয় সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যে ভিন্ন আঙ্গিকে পরিচালিত সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করা হয়। এবারের বাজেট উপস্থাপনকালে সংসদের পরিবেশে যেমন ভিন্নতা ছিল তেমনি বাজেট বক্তৃতায়ও ছিল নতুনত্ব। করোনার কারণে বাজেট বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করা হয়। বেশির ভাগ বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করা হয়। আর অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতার একটি বড় অংশ উপস্থাপিত হয় ডিজিটাল মাধ্যমে। এর বাইরে এবারের বাজেট বক্তৃতায় সুন্দর যে উদাহরণটি সৃষ্টি হয়েছে সেটা হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআনের উদ্ধৃতি। এছাড়া অর্থমন্ত্রীর কণ্ঠে চলমান করোনা দুর্যোগ থেকে আল্লাহর কাছে বিনীত প্রার্থনার বিষয়টিও দৃষ্টি কেড়েছে সবার।

বাজেট বক্তৃতায় চলমান করোনা মহামারিকে অর্থমন্ত্রী আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য কঠিন পরীক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর সপক্ষে তিনি সুরা বাকারার ১৫৫ নম্বর আয়াত উপস্থাপন করেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।’ তবে তিনি একই সুরার ১৮৫ নম্বর আয়াত উল্লেখ করে আল্লাহ যে মানবজাতির জন্য সহজ চান, জটিলতা চান না সেটা জানিয়েছেন। এছাড়া সুরা আলাম নাশরাহ এর ৫ ও ৬ নম্বর আয়াত উল্লেখ করে আশার বাণী শুনিয়েছেন মন্ত্রী। সেই আয়াত দুটিতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সঙ্গে স্বস্তি রয়েছে।’

প্রতি বছর জুন মাসে বাজেট দেয়া হয়। ১০/১২ বার বাজেট দিয়ে ইতিহাস গড়া জাঁদরেল অর্থমন্ত্রীদের বাজেট বক্তৃতা আমরা অনেক শুনেছি। কিন্তু কোরআনে কারিমের এতো উদ্ধৃতি আর কোনো বাজেট বক্তৃতায় ছিল বলে মনে পড়ে না। আল্লাহর একত্মবাদে বিশ্বাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের বাজেট বক্তৃতায় কোরআনের উদ্ধৃতি থাকাটা বিচিত্র কিছু না। তবে এর কালচার না থাকায় এবারের করোনাকালের বাজেট বক্তৃতা সবার দৃষ্টি কেড়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক দিক।

তবে সংসদে যখন অর্থমন্ত্রী কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপন করছিলেন তখন খুব লক্ষ্য করে দেখেছি, কিছু কিছু সংসদ সদস্যের চেহারায় ছিল বিরক্তির ভাব। মাস্কে ঢাকা চেহারায় সেটা পুরোপুরি বোঝা না গেলেও কিছুটা আঁচ করা গেছে। আর সেটা হওয়ারই কথা। এই সংসদেই ইসলামকে নানাভাবে কটাক্য করে বক্তৃতা কম হয়নি। মুসলিম নাম-পরিচয় ধারণ করা সত্ত্বেও ভেতরে ইসলাম বিদ্বেষ লালন করেন এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যাও খুব কম না। তারা যখন জাতীয় সংসদের মতো একটি জায়গায় কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের মাধ্যমে এতোগুলো উদ্ধৃতি দিতে দেখেন তখন তো একটু অস্বস্তি লাগারই কথা!

তবে যতদূর জেনেছি অর্থমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে কোরআন রিসার্চ করেন। তিনি তার বক্তৃতায় প্রায়ই কোরআনের উদ্ধৃতি দেন। সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রোগ্রামেও মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রায়ই কোরআনের আলোচনায় চলে যান। বিশেষ করে দেশের অর্থনীতি স্বাবলম্বী করতে জাকাতের ব্যাপারে তিনি সব সময় জোর দিয়ে থাকেন। অনেকের মতো তারও ব্যক্তিগত অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে, তবে কোরআনের প্রতি তার এই অনুরাগ ভালো লাগার মতো একটি বিষয়।

বাজেট বক্তৃতা শেষ করার আগে মহান আল্লাহর দরবারে অর্থমন্ত্রীর বিনীত প্রার্থনাও দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি বারবার দোয়া করেছেন, ‘ইয়া হায়্যু ইয়া কায়্যুম বি রাহমাতিকা নাসতাগিস।’ হে আল্লাহ! তোমার রহমতের ওপর ভরসা করে তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি। হে আমাদের প্রভু! তোমার রহমত থেকে আমাদের বঞ্চিত করো না। তিনি বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছেন এভাবে- তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক। ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন কাদির। সালামুন আলাল মুরসালিন। ওয়ালহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। তিনি আল্লাহর দরবারে করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে একটি সুন্দর সকালের প্রত্যাশা করেছেন।

মূলত করোনার ভয়াল থাবা সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মনোজগতেও ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাকালে বিভিন্ন প্রোগ্রামে করোনার কাছে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অসহায়ত্ব তুলে ধরেন। আল্লাহর এই আজাবের সামনে নিজেরা কতটা শক্তিহীন সেটা অকপটে স্বীকার করেন। সরকারপ্রধান সবসময় এই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য দেশবাসীকে আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি প্রার্থনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সরকারের কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখ থেকে করোনা সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্য শোনা গেলেও বেশির ভাগ এটা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন, এই ক্ষমতা দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আল্লাহর শক্তির সামনে নিজেরা কতটা শক্তিহীন সেটা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।

করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আলেম-উলামা এটাকে আল্লাহর আজাব ও পরীক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করলে কথিত অনেক সুশীল এর কড়া সমালোচনা করেন। টক শোতে এটা নিয়ে আলোচনা হতেও দেখেছি। তারা এটাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, আল্লাহর আজাব হিসেবে মানতে নারাজ। তবে বৈশ্বিক অবস্থা যখন ভয়াবহ রূপ নেয় তখন তারা চুপসে যায়। গত এপ্রিলে অল্প সময়ের জন্য বসা জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে সবাই প্রকাশ্যে তওবা করেন। আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচার আকুতি জানান। গত ১০ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশনের শুরুর দিনেও এমপি রুহুল আমিন মাদানীর মোনাজাতে ছিল অনুশোচনার অশ্রু আর করোনার আজাব থেকে বাঁচার আকুতি। যেভাবেই হোক, সংসদে থাকা রাম-বাম, অন্তরে ইসলাম বিদ্বেষ পোষণকারীদের অন্তত বাহ্যিকভাবে হলেও করোনার কারণে আল্লাহর কুদরতের সামনে নথি স্বীকার করতে দেখা গেছে। এটাও কম কিসে!

অর্থমন্ত্রী একটি আলোকিত সকালের প্রত্যাশা করেছেন। এটা গোটা জাতির প্রার্থনা। আমরাও আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাই, তিনি যেন আমাদেরকে একটি আলোকিত সকাল দান করেন। করোনার এই মহামারি থেকে জাতিকে রক্ষা করেন। আমিন।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ