বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


কবর যিয়ারত নিয়ে কিছু কথা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা আব্দুল্লাহ আল-কাউসার।।

ইসলামের প্রথম জামানায় ভ্রান্ততার চাদর পরিধানকারীদের সংখ্যাধিক্য ছিল খুব। সমগ্র আরবজুড়ে ছিল কুফর-শিরকের ঘনঘটা। তারা কবর পূজায় মত্ত ছিল হরদম!

এহেন মুহূর্তে; কবর পূজার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করণার্থে কবর যিয়ারত করা থেকে রাসুল (সা.) প্রথমত লোকদের নিষেধ করেন। অতঃপর, যখন সেই রেওয়াজ বিদূরিত হল তখন তিনি কবর যিয়ারতের অনুমতিক্রমে বলেছেন-

كنت نهيتكم عن زيارة القبور، فزوروها، فإنها تزهد في الدنيا وتذكر الآخرة.

আমি তোমাদের কবর-যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন ঐ নিষেধ মানসূখ করা হচ্ছে) এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কারণ তা দুনিয়ার মোহ দূর করে এবং আখিরাতকে মনে করিয়ে দেয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৫৭১; মিশকাত পৃ. ১৫৪

সুতরাং, কবরে যাওয়ার অনুমতি আছে। তবে! মহিলাদের বেলায় খানিকটা মতপার্থক্য রয়েছে। কিছুসংখ্যক উলামাদের মতে মহিলাদের বেলায় কবর যিয়ারতের অনুমতি নেই।

কারণ, আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসুলের হাদিস: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم لعن زوارات القبور

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী নারীদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৪৪৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৫৭৫; মিশকাত পৃ. ১৫৪

আর কেহ-কেহ বলেন, এটি কবর যিয়ারতের অনুমতির আগের বিধান। তাদের মতে; যিয়ারতের ক্ষেত্রে নারীদেরও অনুমতি আছে।

নারীদের নিষেধ করার তাৎপর্য এই যে, ইলম ও সবরের স্বল্পতার কারণে তারা ওখানে গিয়ে অস্থিরতা, কান্নাকাটি এবং বিদআত ও গায়রে শরয়ী আচরণ থেকে বিরত থাকতে পারে না। যেহেতু তাদের ওখানে যাওয়ায় ফিতনার আশঙ্কাই প্রবল তাই তাদেরকে বিশেষভাবে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যদি কোনো নারী ওখানে গিয়ে কোনো প্রকারের বিদআত ও গায়রে শরয়ী কার্যকলাপে লিপ্ত না হন তাহলে তার অনুমতি আছে। তবে বৃদ্ধা নারীরা যেতে পারেন, যুবতীদের না যাওয়াই ভালো। -ফাতাওয়ায়ে শামী খ. ২ পৃ. ২৪২, নতুন মুদ্রণ, মিশর

কবর যিয়ারতের নিয়ম-পদ্ধতি! রাসুল (সা.) কবর যিয়ারত পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন- কবরস্থানে গমনকারী যেন কবরবাসীদের এ বলে সালাম দেয়-

السلام عليكم دار قوم مؤمنين، أنتم لنا فرط ونحن لكم تبع، وإنا إن شاء الله بكم لاحقون، نسأل الله لنا ولكم العافية.

হে মুমিনদের বসতি! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী আর আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। আর ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সাথে যুক্ত হব। আমরা আল্লাহর কাছে আফিয়াত চাই। আমাদেরও জন্য এবং তোমাদেরও জন্য। -মুসলিম ১/৩১৩,৩১৪; সুনানে নাসায়ী ১/২২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯৮৫

এরপর কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে এবং কিছু পড়ে ঈসালে ছওয়াব করবে। হাদীসে কিছু কিছু সূরার কিছু বিশেষ ফযীলতও উল্লেখিত হয়েছে। তেমনি দরূদ শরীফেরও ফযীলত এসেছে। তো দরূদ শরীফ, সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস এবং আরো যেসব সূরা ইচ্ছা পড়ে ঈসালে ছওয়াব করবে। ওখানের দুআ হয়তো হাত না উঠিয়ে করবে অথবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে কিবলামুখী হয়ে করবে। -ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী খ. ৫ পৃ. ৩৫০ কিতাবুল কারাহিয়্যা

যিয়ারতের উদ্দেশ্য! কবর যিয়ারতের দুটি উদ্দেশ্য :- প্রথমত, কবর-যিয়ারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তা এই যে, কবরের দৃশ্য দেখে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্বের বিশ্বাস তাজা করা, নিজের মৃত্যু ও কবর-জীবনকে স্মরণ করা এবং আখিরাতের প্রস্তুতির সংকল্প গ্রহণ করা।

দ্বিতীয়ত, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা এবং মাগফিরাতের দুআ ও ঈসালে ছওযাবের মাধ্যমে তাদের উপকৃত করা। আর আল্লাহওয়ালাদের কবর যিয়ারতের দ্বারা যে পথে চলে তারা আল্লাহর দরবারে মাকবূল হয়েছেন সে পথ চলাতে দৃঢ়বদ্ধ হওয়া।

আল্লাহ তা'লা যেন আমাদের সহিহ সমঝ দান করেন আমিন!

লেখক: শিক্ষক, দারুস সালাম ইসলামিয়া মাদ্রাসা দেবিদ্বার কুমিল্লা।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ