বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


মণিপুরি মুসলমানদের ঈদের জনপ্রিয় খাবার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম।।

দীর্ঘ একমাস রোজা পালন শেষে সারাবিশ্বের মুসলিমরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদ উদযাপন করে থাকেন। ঈদ মানেই উৎসব। আর এই উৎসবের প্রধান আয়োজন থাকে ভারত বাংলাদেশসহ মণিপুরি মুসলমানদের ঈদ উদযাপনের প্রধান একটি ঐতিহ্যবাহী মারোইতাল, চিনিতাল নামে দুই ধরনের পিঠা সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার। এ পিঠা খেতে ভালোবাসেন না এমন মণিপুরি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মারোইতাল, চিনিতাল মণিপুরির নিজস্ব আদিম আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মণিপুরির বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠান এবং অতিথি আপ্যায়নের বড় এক অনুসঙ্গ পিঠা। মণিপুরির লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে মারোইতাল, চিনিতাল (পিঠা) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।

সাধারণত বছরের দুটি ঈদে, বিয়ে, সমাজিক অনুষ্ঠানে এ খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে মণিপুরি সমাজে বিশেষ আদরণীয়। এছাড়াও, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষে-মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরো দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

মণিপুরি মুসলমানরা এ ধরনের পিঠা বানিয়ে নিজের পরিচয় এবং অধিকার ফিরে পাবার গল্প লোকমুখে ঘুরতে থাকে প্রজন্মান্তরে, এ জনপদের খাদ্যসংস্কৃতিতে এ পিঠা জনপ্রিয় আর সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঈদে পশুর মাংস দিয়ে চালের গুঁড়ার বানানো তাদের এই পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশষ্য ধান৷ আর মণিপুরি পুরুষদের প্রধান পেশা হলো কৃষি। ধান থেকে চাল এবং সেই চালের গুঁড়া পিঠা তৈরির মূল উপাদান৷ তাই পিঠা তৈরি উপকরণ প্রতিটি ঘরে ঘরে থাকে। এতে সহজে বিন্নি চালের গুড়া দিয়ে তৈরি করা মুসলিম মণিপুরিরা মজাদার এ পিঠা তৈরি করে চিনিতাল (গুড় মিশ্রিত তৈলের পিঠা) মারোইতাল (নানান মসলা দিয়ে তৈরি পিঠা)। এই পিঠার উৎপত্তি হিসেবে ভারতের মণিপুর রাজ্যের বলে শোনা যায়। এ পিঠা আকৃতিতে গোলাকার এবং এ পিঠা খুব সাধারণ হলে বানাতে কিন্তু অসাধারণ দক্ষতা লাগে।

ভারত উপমহাদেশীয় সভ্যতার প্রেক্ষাপটে কখন থেকে মণিপুরিদের খাদ্যসংস্কৃতিতে এ পিঠা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তার কোনো লিখিত বিবরণ নেই৷ প্রচলিত গল্প, প্রাচীন বইপত্র থেকে এর প্রাচীনত্ব নির্ণয় করা কিছুটা কঠিনই বটে৷ এসব পিঠা খাবার প্রচলন মণিপুরি সমাজেও অনেক প্রাচীন৷

প্রতিটি ঈদের আগে একসময় বাড়িতে বাড়িতে চালের গুঁড়া তৈরি ও গুঁড়া রোদে শুকানোর ধুম পড়ে যায়। প্রায় অনেকের বাড়িতে একসময় ঢেঁকি ছিল, সেখানে চলছে দিন-রাত চালের গুঁড়া তৈরির কাজ। ঢেঁকির শব্দে জমজমাট এসব বাড়ি। বর্তমানে ঢেঁকিতে চালের গুঁড়া তৈরির কাজ না করে ধান-গম ভাঙানোর কলে গুঁড়া করেন। এখনোও বলতে গেলে ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে আরম্ভ করে বাংলাদেশ পর্যন্ত যত মণিপুরি মুসলমান (পাঙালরা) সবাই ঈদ এলে মারোইতাল, চিনিতাল বা তাউতাল-ছাড়া ঈদ উৎসব বুঝে না।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ