বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


ইতিকাফ: আল্লাহর নৈকট্য লাভের সিঁড়ি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ইতিকাফ আল্লাহ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। খোদার প্রেমে মগ্ন থাকার কার্যকরী গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত।আল্লাহর কাছে যাওয়ার অপার সুযোগ।

ইতিকাফ নিজেকে আল্লাহর সমীপে সপে দেয়া হয়।জাগতিক চিন্তাধারা ও পৃথিবীর সকল প্রয়োজনীয়তাকে সাময়িক মুলতবি রেখে পরকাল পানে ছুটে চলার শিক্ষা দেয় এতেকাফ।ইবাদতের মানোয়ন্ন, আল্লাহর সাথে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন ও নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ থেকে খোশনদি অর্জন করা যায়।

ইতিকাফ আরবী শব্দ ও ইসলামী শরীয়াহর একটি পরিভাষা।এতেকাফের আক্ষরিক অর্থ আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। শরীয়তের পরিভাষায় দুনিয়ার সকল কার্যক্রম থেকে অবসর গ্রহন করে ইবাদতের মানসে নিয়্যতের সাথে মসজিদে অবস্থান করে মহান রাব্বুল আলামীনের ইবাদতে মশগুল থাকাকে এতেকাফ বলা হয়।ইসলামে তিন প্রকারের এতেকাফ পাওয়া যায়।ওয়াজিব, সুন্নতে মুআক্কাদা, মুস্তাহাব ।

ওয়াজিব ইতিকাফ: কোন কাজ অর্জিত হওয়ার শর্তে বা শর্তহীনভাবে এতেকাফ করার মান্নত করাকে ওয়াজিব এতেকাফ বলা হয়।ওয়াজিব এতেকাফের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক।

মুস্তাহাব ইতিকাফ: ওয়াজিব এতেকাফ ও রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ ছাড়া অন্য যে কোন সময় এতেকাফ করা কে মুস্তাহাব এতেকাফ বলা হয়।
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা: রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া।

এতেকাফের মহাত্ম ও ফজিলত অপরিসীম।হাদীসে নববীতে এসেছে, কোন মানুষ রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করলে তাঁকে দুটি হজ্জ ও দুটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হয় (বায়হাকী)। হযরত আয়েশা রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন মৃত্যু অবধি এতেকাফ করেছেন। নবীজী স.-এর ইন্তেকালের পর তাঁর পূণ্যবতী পত্নীগণ এতেকাফ করেছেন (বুখারী -মুসলিম)। নবী করিম সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে সর্বদা এতেকাফ করতেন। হযরত আনাসরা.বলেন, রাসূল স. প্রতি রমজানের তৃতীয় দশকে এতেকাফ করতেন। এক বত্‍সর এতেকাফ করতে পারেননি, তাই পরবর্তী রমজানে দুই দশক এতেকাফ করেন (তিরমিজি)।

আহাদীস থেকে প্রতীয়মান হলো রমজানের শেষ দশকের এতেকাফের তাত্‍পর্য ও অত্যধিক বৈশিষ্ট রয়েছে। বিশ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত থেকে পশ্চিমাকাশে ঈদের চাঁদ দেখা পর্যন্ত একনিষ্ট হৃদয়ে প্রভূর ধ্যানে মসজিদে এতেকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কেফায়া। সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরিত্যাগ করলে গোনাহ হয়ে।গ্রাম বা মহল্লার মসজিদে কিছু সংখ্যক লোক এতেকাফ আদায় করলে পুরো এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। মহল্লার মসজিদে কোন মানুষ এতেকাফে না বসলে মহল্লাবাসী সবাই গোনাহগার হবে।পুরুষরা এতেকাফ করবেন মসজিদে আর মহিলারা এতেকাফ করবেন বাড়ির নির্দিষ্ট কোন রুমে বা কামরার নির্দিষ্ট কোণে।

এতেকাফের জরুরী কতিপয় মাসায়েল: মহিলাদের জন্য মসজিদে এতেকাফ করা মকরুহে তাহরিমী।

এতেকাফের শর্তাবলী : এক.পুরুষদের জন্য জামাত অনুষ্ঠিত হয় এমন মসজিদে এতেকাফ করতে হবে। দুই. এতেকাফের নিয়্যত অবশ্যি হতে হবে।আরবীতে নিয়্যত করা জরুরী নয়।মনের দৃঢ় সংকল্পের নামই নিয়্যত।তিন.নারীদের পিরিয়ড-ঋতুস্রাব ও প্রসবকালীন নেফাস থেকে পুতঃপবিত্র হতে হবে।পুরুষের ফরজ গোসল ও এতেকাফের জন্য প্রতিবন্ধক।অবশ্য সাথে সাথে পবিত্র হয়ে পুনরায় এতেকাফে বসতে পারবে (আলমগীরী,বাহরুর রায়েক)।কারও সাথে আর্থিক চুক্তি তথা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে এতেকাফের উদ্দেশ্যে মসজিদে আবদ্ধ থাকা ও এতেকাফে প্রবেশ করানো উভয়টাই নাজায়েয (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া )। এতেকাফ রত অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে বের হওয়া যাবেনা। একান্ত যৌক্তিক ও শরয়ী প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সুযোগ রয়েছে।মানুষের অভ্যাসগত স্বাভাবিক প্রয়োজন প্রস্রাব, পায়খানা, ফরজ গোসল, বাড়ি থেকে মসজিদে খাবার নিয়ে আসার লোক না থাকলে খাবার নিয়ে আসা। শরয়ী প্রয়োজনে ও বের হওয়া যায় যেমন, জুমুআর নামাজ পড়তে জামে মসজিদে গমন করা (দুররে মুখতার)।তীব্র প্রয়োজনে মসজিদের বাহিরে গমন করলে জুরুরত ফুরিয়ে গেলে বিলম্ব না করে দ্রুত মসজিদে ফিরে আসতে হবে।এতেকাফে নিষিদ্ধ কর্ম:স্ত্রী সহবাস করলে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যায়।সঙ্গমের প্রাক প্রাথমিক কাজ চুম্বন ও আলিঙ্গনের ফলে বীর্যপাত হলে এতেকাফ ভেঙ্গে যায়।কোন শরীআহ অনুমোদিত কাজ ছাড়া অযথা মসজিদ থেকে বের হলে এতেকাফ আর থাকবে না।পূণ্যের কাজ ভেবে এতেকাফে নীরবতা অবলম্বন করা মাহরুহে তাহরিমী।অপ্রয়োজনে বা ঢুনকো অজুহাতে পার্থিব কাজে জড়িয়ে পড়া মাকরুহে তাহরিমী।এতেকাফে বসে যা করবেন : আল্লাহর নৈকট্য লাভে আত্মনিয়োগ করতে হবে।পরকালের মুক্তির জন্য যাবতীয় নেক কাজের প্রসেসিং ও বাস্তব জীবন্ত আমল করতে হবে। ভাল কথা ছাড়া কোন শব্দও মুখ থেকে উচ্চারণ না করা। আলস্যের চাদর জেড়ে পেলে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির আযকার ও তাসবীহ তাহলীলে নিমজ্জিত থাকা।কুরআনের তাফসীর , হাদীস, ফেকাহ ও দ্বীনি বইপত্র পড়তে পারেন।এতেকাফে যা বর্জন করবেন: মিথ্যা, গীবত, সকল গোনাহর কাজ ত্যাগ করতে হবে। পার্থিব কথাবার্তা বর্জন করতে হবে।আশ্লীল কথন পরিত্যাগ করতে হবে।ইন্টারনেট ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ট বন্ধ রাখুন।ফেসবুক, টুইটারে টু মারবেন না।মোবাইল ফোনে গল্পগুজব করবেন না। ওয়াটস এপ ও মেসেন্জার বন্ধ রাখুন। চ্যাটিং থেকে বিরত থাকুন।এতেকাফের সময়ে লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।হাজার রাতের সেরা রাত শবে কদরের কদর করুন। এতেকাফে আল্লাহ প্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে গোনাহ মাফের ব্যবস্থা করতে পারেন।ভালবাসার সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে পারেন আল্লাহর সাথে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ