শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


পশুপাখিদের নিয়ে যা বলেছে কুরআন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ফরহাদ খান নাঈম।।

মানবজাতির ন্যায় পশুপাখিরাও আল্লাহ তা'য়ালার সৃষ্টি। কুরআন মাজিদের প্রায় ২০০ টিরও বেশি আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা পশুপাখিদের নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া পবিত্র কুরআনের ছয়টি ‌সূরা বিভিন্ন পশুপাখির নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- ১. সূরা বাকারা, কুরআনের ২ নং সূরা। বাকারা শব্দের অর্থ গাভি। ২. সূরা আন'আম, কুরআনের ৬ নং সূরা। আন'আম শব্দের অর্থ চতুষ্পদ জন্তু।

৩. সূরা নাহল, কুরআনের ১৬ নং সূরা। নাহল শব্দের অর্থ মৌমাছি। ৪. সূরা নামল, কুরআনের ২৭ নং সূরা। নামল শব্দের অর্থ পিঁপড়া।

৫. সূরা আনকাবুত, কুরআনের ২৯ নং সূরা। আনকাবুত শব্দের অর্থ মাকড়সা। ৬. সূরা ফিল, কুরআনের ১০৫ নং সূরা। ফিল শব্দের অর্থ হাতি। পবিত্র কুরআনে পশুপাখিদের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কুরআন মাজিদে পশুপাখিদের উত্তম বৈশিষ্ট্যসমূহ অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পশুপাখি সৃষ্টির আলোচনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তা'য়ালার মহত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'য়ালা পশুপাখিকে মানবজাতির জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ উল্লেখ করেছেন যাতে করে মানুষ এদের উত্তম স্বভাব থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে।

মানুষের উপকারার্থে পশুপাখি। পশুপাখিদের থেকে মানবজাতির উপকৃত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,

"চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্যে শীত বস্ত্রের উপকরণসহ আরো অনেক উপকার রয়েছে এবং এদের কিছু সংখ্যককে তোমরা আহার্যে পরিণত করে থাক।

আর তোমরা এদের সৌন্দর্য উপভোগ করো যখন বিকালে এদেরকে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণভূমিতে নিয়ে যাও।

এরা তোমাদের বোঝা এমন শহর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়, যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত পৌঁছাতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়াশীল, পরম দয়ালু।

তোমাদের আরোহণের জন্যে এবং শোভার জন্যে তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না।" সূরা নাহল: ৫ - ৮

পশুপাখিদের প্রতি শ্রদ্ধানুভূতি লালন করা

পবিত্র কুরআনে সালিহ আ. এর কওম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নবি সালিহ আ. এর সম্প্রদায় তাঁর আনীত ধর্মকে উপেক্ষা করে। তারা এক আল্লাহর উপাসনা করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা সালিহ আ. এর আহ্বানের প্রতি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তাদের মূর্তি পূজা চালিয়ে যায়।

একদা নবি সালিহ আ. তাঁর কওমকে দাওয়াত দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে তারা সালিহ আ. এর কাছে তাঁর নবুওয়াতের প্রমাণ দাবি করে। তারা বলে, তুমি যদি সত্যি সত্যিই আল্লাহ তা'য়ালার নবি হও, তাহলে ওই পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি দুগ্ধবতী গর্ভধারিনী উটনি নিয়ে আসো; যদিও তারা জানতো, এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার।

কিন্তু আল্লাহ তা'য়ালা সালিহ আ. এর ডাকে সাড়া দিলেন ও নবুওয়াতের নিদর্শনস্বরূপ তাঁর কওমের জন্য একটি দুগ্ধবতী গর্ভধারিনী উটনি দান করলেন।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- (সালিহ আ. তাঁর কওমকে উদ্দেশ্য করে বলেন) আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও, এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করবে না। নতুবা অতি সত্বর তোমাদেরকে আযাব পাকড়াও করবে। সূরা হুদ: ৬৪

অতঃপর আল্লাহর রসূল (সালিহ আ.) তাদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহর উষ্ট্রীকে (কোনো রূপ ক্ষতি করা থেকে) ও তাকে পানি পান করা (থেকে বাঁধা দিতে) বিরত থাকো।

কিন্তু তারা তাঁর উপদেশ অমান্য করেছিল এবং উষ্ট্রীর পা কর্তন করেছিল। তাদের পাপের কারণে তাদের পালনকর্তা তাদের উপর ধ্বংস নাযিল করে একাকার করে দিলেন। সূরা শামস: ১৩ - ১৪

এখান থেকে বোঝা যায়, পশুপাখি আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য বিশেষ উপহার। এদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করতে হবে ও কোনো অবস্থাতেই এদের ক্ষতি করা যাবে না।

পশুপাখি মানবজাতির জন্য আনুগত্য ও উত্তম আচরণের নিদর্শন

পশুপাখিদের থেকে মানবজাতির অনেক কিছু শেখার আছে। পশুপাখি আনুগত্য, ধৈর্য্য ও প্রভুভক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এদের মধ্যে যেসব উত্তম বৈশিষ্ট্য রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যেও তা পাওয়া যায় না।

যেমনটি আসহাবে কাহফ এর ঘটনায় একটি বিশ্বস্ত কুকুরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একদল ধর্মপরায়ণ যুবক একটি গুহায় আত্মগোপন করে ছিলো। গুহার ভেতরে তারা যখন ঘুমিয়ে পড়তো, তখন বিশ্বস্ত কুকুরটি গুহার মুখে দাঁড়িয়ে তাদেরকে পাহারা দিতো।

বর্ণিত আছে, তারা তিনশ' বছর গুহার ভেতরে অবস্থান করেছিলো, আর এই পুরো সময় জুড়েই কুকুরটি তাদের পাহারার কাজে নিয়োজিত ছিলো।

সুতরাং পশুপাখিদের সাথে কখনোই নির্দয় আচরণ করা উচিত নয়; বরং পবিত্র কুরআনে যে কারণে আল্লাহ তা'য়ালা পশুপাখিদের আলোচনা করেছেন তার উদ্দেশ্য অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে।

জাহারা ডট কম থেকে অনুদিত


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ