বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


করোনার ছুটি কিভাবে কাটাচ্ছে ইবি শিক্ষার্থীরা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রফিকুল ইসলাম জসিম
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যর মিছিল। কার্যত লকডাউনে হয়ে পড়ছে পুরো বিশ্ব। আমাদের দেশেও বাড়ছে মৃত্যু ও আক্তান্তের সংখ্যা। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যায়গুলো বন্ধ। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হোম কোয়ারেন্টানে দিনগুলো কিভাবে পার করছে তা জানাচ্ছে আওয়ার ইসলাম পাঠকদের।

মুহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম, বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান। অদৃশ্য মরণ ঘাতকের কাছে মানুষ কতটা অসহায় তা বুঝিয়ে দিল করোনা। আমার মনে হয়, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার ‘মেডিসিন’ হলো বাসায় থাকা। ক্যাম্পাসে এখন করোনার ছুটি। চলে এসেছি গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে। সেই থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে বাসাতেই আছি।

জীবনের এই নতুন অভিজ্ঞতায় আমার প্রতিদিনের গল্পগুলো প্রায় অভিন্ন। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে দীর্ঘশ্বাসও তত বাড়ছে। নিঃশ্বাস ঘনীভূত হয়ে উঠেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায়। তবে প্রতি মুহূর্তে এতসব দুঃসংবাদের মাঝে একটি ভালো খবর এই যে, পরিবারের সঙ্গে একটা শ্রেষ্ঠ সময় পার করছি। সেই সাথে নতুন কিছু জানা ও শেখার মাধ্যমে সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।

বই পড়ে, টিভি দেখে, স্যোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে মূলত সময় কাটছে। কোন কিছুতেই তাড়া নেই, হাতে অফুরন্ত সময়। আমি অবসর ভলোবাসি, তবে এই ভৌতিক অবসর আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। রাতগুলো যেন একা, খুব আলসেমিতে কাটে। বিশেষ করে, আমার মতো রাতজাগা পাখির জন্য এই রাতগুলো খুব কঠিন। "সুখ তুমি রংধনুর মত রঙ্গিন, স্মৃতি তুমি বেদনার কাছাকাছি চিরদিন।

সত্যিই হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও মন পড়ে আছে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ, টিএসসি, অনুষদ ভবন, ডাইনা চত্বর, প্যারাডাইস রোড, খেলার মাঠ আর সুবহান মামার চায়ের দোকানে। সেই সাথে মিস করছি রোজ সকালের ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, মিডটার্মের সেই প্যারাময় দিনগুলো।

ডিপার্টমেন্টে কারণে অকারণে ঘোরাঘুরি, ক্লাস শেষে হঠাৎ করেই মধুপুর এ খেতে যাওয়া, লাস্ট বাসে শহরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। এক কথায় সারাদিন মুক্ত পাখির মতো ঘুরে বেড়ানো আর দিন শেষে জিয়া হলে ফিরে আসা। এভাবেই কাটতো ক্যাম্পাসে প্রতিটি দিন। সেই দিনগুলো জানি না, আবার কবে ফিরে পাবো।

সবার জীবনের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে উপরওয়ালার কাছে একটি সুস্থ-সুন্দর বিশুদ্ধ বাতাসে ভরা পৃথিবীর প্রার্থনা করি সবসময়। সেই ভোরের অপেক্ষায় দিন গুনছি। যেদিন ঘুম ভেঙে উঠে শুনবো পৃথিবীটা সুস্থ আছে। করোনার ঝড় থেমে গেছে।

শেখ রাইয়ান উদ্দিন, বিভাগ, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ কথাটি আজ বাধ্য হয়েই আমাদের সকলকে মানতে হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে এক অচেনা অজানা অণুজীবের রাজত্ব। আমরা সামাজিক জীব। আর আজ, আমরাই সামাজিক দূরত্ব বজায় জীবন পার করছি! গত মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে প্রিয় ক্যাম্পাসের পরিচিত স্মৃতিমাখা রাস্তায় আর পা পরছে না। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আর্দশ বাণী শুনতে পাচ্ছি না।

প্রিয় বন্ধুদের সাথে আলাপ বন্ধ। অনেক না পাওয়ার ভেতরও সবচেয়ে বড় পাওয়া পরিবার। লক ডাউনের এই সময়টা নিজেকে প্রস্তুত করার একটা উপযুক্ত সময়। সাধারণত আমি কল্পবিজ্ঞানের বই, রহস্য উপন্যাস, অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী আর বিভিন্ন ধর্মীয় বই পড়েই দিন কাটাচ্ছি।

এরই সাথে নিজের সাধ্যের ভেতর থেকে অসহায়দের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে অনেকটা দুধের সাধ ঘোলে মিঠাচ্ছি। যেহেতু হতাশ হওয়া পাপ, তাই আশায় বুক বেঁধে আছি নিশ্চয় একদিন এই দুর্যোগ থেকে আমাদের পরিত্রাণ মিলবে। অবারিত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হবো আমরা।

আবুজার গিফারী, বিভাগ, আইন,আইন অনুষদ। বিশ্ব আজ অদৃশ্য শত্রুর কবলে বিপর্যস্ত। আমরা এই অদৃশ্য শত্রুর কবল থেকে মুক্তি চাই। পৃথিবীতে মৃত্যুর মিছিল ও সংক্রমণের সংখ্যা তর তর করে বেড়েই চলেছে। সারা পৃথিবী প্রতিকার হিসেবে যেটা বেছে নিয়েছে তা হলো লকডাউন। ফলশ্রুতিতে মানুষ এখন গৃহবন্দী।

২০১৩ সালের পর থেকে পড়াশুনার জন্য বাড়ির বাইরে থাকা হয়। এ কারণে বাড়িতে দু'ঈদ ও বিশেষ ছুটি ছাড়া খুব কমই আসা হয়। লকডাউনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাস গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যার ফলে এখন বাড়িতেই অবস্থান করছি আর বাড়িতে অবস্থানের ফলে বাবা মায়ের কাছে থাকার বড্ড সু্যোগ জুটেছে। বাবা মা'কে দেখাশুনা করি।

প্রত্যহ সকালে ছোট বোনদের পড়াতেও বেশ মন্দ লাগে না। তাদের সাথে গল্পের আসরটাও বেশ খুনসুটি হয়। দাদা জান্নাতবাসী হয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে, দাদী আমাকে খুব ভালোবাসেন যার ফলে দিনভর জুটিয়ে গল্প করতে লোকের অভাব হয় না। বই পড়তে ভালোই লাগে, নিজের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি দিনের অনেকটা সময় গল্প, উপন্যাস, পত্রিকা পড়ে কেটে যায়।

নিয়মিত নামাজ পড়ি ও নানাবিধ ধর্মীয় কাজ পালন করি। সোশ্যাল মিডিয়া ও গুগল তো আছেই সেখানেও দখল রাখি।

পত্রিকাতে লেখালেখি আগে করা হয় নি তবে ইদানিংকালে বাড়তি আগ্রহ জন্মানোর কারণে পত্রিকাগুলোতে সচেতনতামূলক লেখালেখি করি। মাঝে মাঝে সিনেমা দেখি ও বাড়ির আশেপাশে ঘুরাফেরা করি। নিজের সাধ্যনুযায়ী মানুষকে সচেতন করি এ মহামারী থেকে বেঁচে থাকার জন্য।

কেননা সচেতনতায় এ ভাইরাসের বড় প্রতিষেধক। মানুষ বাড়ি থেকে বের না হলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। সুতরাং আমরা আমাদের জন্য হলেও বাড়িতে অবস্থান করে নিজেকে ও অপরকে ঝুঁকিমুক্ত রাখি। এই অদৃশ্য শত্রুকে আমরা অতিশীঘ্রই বধ করবো। কিন্তু মাঝখানে আমরা অনেককে ও অনেক কিছু হারাবো। তবু সেসবের প্রতিদানে হলেও জয়টা আসুক। দ্রুত আসুক। একটু দেরীতে হলেও নতুন সকাল আসবে,ইনশাআল্লাহ।

অনিল মুহাম্মদ মোমিন, বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ: হোম কোয়ারান্টাইনের দিনগুলি। ছন্দে চলা জীবনে যখন দ্রুত গতিতে এগোচ্ছি তখন হঠাৎ করেই থামতে হলো।

ব্যস্ত জীবনে হাসফাস করতাম যদি ছুটি পেতাম একটু! তারপর ভয়াবহ করোনা এসে গেল। সপ্তাহ পক্ষ মাস পেরিয়ে ছুটি এখনো অনির্দিষ্ট সীমায় পৌঁছে গেছে। এ ছুটি যেন রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পের ফটিকের সেই কথার মতো আমার এখন ছুটি হয়েছে মা।

অদৃশ্য শত্রু যেন প্রকৃতিকে বাঁচানো জন্যই মানুষের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমাদের ঘরে রেখে প্রকৃতি সাজাচ্ছে। একমাসেরও বেশি সময় আমরা ঘরবন্দী। বাইরে বের হওয়া বন্ধ হলেও থেমে নেই জীবন। হোম কোয়ারান্টাইনের এই দিনগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা হচ্ছে না তেমন। এক আধটু লেখালেখির সুবাদে এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে বেশি সময় কাটে। চলছে অল্প লেখালেখিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পরিবার কেন্দ্রীক জীবন এখন।

পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ফোন ও ফেসবুকে করোনা রোধে সচেতনতা নিয়ে কথা বলছি। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতায় কাজ করছি। করোনায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে যুক্ত হয়েছি একটি সংগঠনের সাথে।

মানুষ ও মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার এখনই সময়। অন্যদিকে ছুটে চলার প্রতিযোগিতায় পরিবার থেকেও আমরা একটু ছুটে গিয়েছিলাম।করোনায় কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এখন সম্পর্ক আরো গভীর হচ্ছে। ঘরদোর ঝাড়ুদেয়া থেকে রান্নায়ও এটা ওটা সাহায্য করছি।ছোটদের পড়া ধরিয়ে দিচ্ছি।

বৈশ্বিক মহামারী করোনা মানুষের জীবনদর্শনে আমূল এক পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। এ যাত্রায় যারা বেঁচে থাকবে তাদের জীবনদর্শন হবে আরো সুন্দর, পবিত্র ও মানবিক। অর্থনৈতিক ভিত্তি নড়ে গেছে। মানুষের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ হিসেবে প্রকৃতির সাথে আমাদের দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে।এখন আত্মোপলদ্ধি হচ্ছে সবার। ধর্মকর্ম মনোযোগ দিচ্ছি।

আধার কেটে আবার আলোয়ে ভরে উঠবে পৃথিবী। স্বাভাবিক জীবন শুরু হোক দ্রুতই এই প্রার্থনা আর প্রত্যাশায় অপেক্ষা করছি অনিশ্চিত এক জীবন থেকে বেড়িয়ে অাসার। সুন্দর একটি পৃথিবীতে সুন্দর মানুষেরা বিরাজ করবে এই কামনা।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ