শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কওমি শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের দাবি তরুণ আলেমদের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সুফিয়ান ফারাবী
বিশেষ প্রতিবেদক>

করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। বন্ধ সব শিক্ষা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ করা হয়েছে সব কওমি মাদ্রাসা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই নিজ নিজ বাড়িতে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষকদের বড় একটি অংশ আর্থিক সংকটে আছেন। অনাহারে দিন কাটানো মাদ্রাসা শিক্ষকের সংখ্যাও কম নয়। শিক্ষকদের এই দুরবস্থা বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসার পর কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য একটি কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের দাবি ওঠছে।

দেশের চিন্তক আলেমরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ট্রাস্ট গঠনের দাবি উঠেছিল। কিন্তু অজানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। একটি ট্রাস্টের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু- তা বর্তমান সময়ে ‘চলমান করোনা দুর্যোগ’ আমাদেরকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে।

বার্তা২৪.কম -এর সিনিয়র নিউজরুম এডিটর মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলছেন, সাময়িক নানা ধরনের সমস্যার সমাধানে একটি কল্যাণ তহবিল গঠন করা অপরিহার্য। বহুদিন পূর্ব থেকে এ দাবি উঠে আসছিল। কিন্তু এখনো বাস্তবে রূপ নেয়নি। দাবি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়ে গেল। বর্তমান সময়ে এ দাবিটি পুনরুত্থিত হয়েছে। যদি বোর্ড কর্তৃপক্ষ দাবিটি আমলে নিয়ে বাস্তবে রূপ দেন, তবে দেশের দুই লাখ কওমি শিক্ষকের মুখে হাসি ফুটাবে।

তিনি বলেন, অবশ্য এর পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে শতভাগ স্বচ্ছতার বিষয়টিকেও। দুই লাখ শিক্ষকের মধ্যে যারা ট্রাস্টের সদস্য হবেন, সবাই যেন সমান অধিকার পান। কেউ যেন বঞ্চিত না হন। কল্যাণ তহবিলে ঢাকার কোনো বড় মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের যেমন অধিকার থাকবে, ঠিক তেমনিভাবে গ্রাম অঞ্চলের ছোট্ট মক্তবের শিক্ষকও সমান অধিকার পাবেন। তাহলেই কেবল কল্যাণ তহবিলের মাধ্যমে দেশের দুই লাখ শিক্ষক উপকৃত হবেন।

মাওলানা আলী হাসান তৈয়ব মনে করছেন, শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তাহলে এই শিক্ষার মেরুদণ্ড হলো শিক্ষকরা। শিক্ষা ছাড়া একটি জাতি যেমনিভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তেমনিভাবে শিক্ষকদের অবহেলা করে অথবা দুর্দিনে তাদের পাশে না দাঁড়ালে শিক্ষা কার্যক্রমও মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। তাই শিক্ষকদের সুবিধা অসুবিধা শিক্ষা বোর্ডকে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষকদের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষক কল্যাণ তহবিল গঠন করা খুবই জরুরি। কিন্তু বর্তমান যে সমস্যা চলছে সেটা সমাধানের চেষ্টা সর্বাগ্রে করা উচিত। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কিছু প্রভাবশালী সম্পদশালী উলামায়ে কেরাম আছেন। শিক্ষকদের এই দুর্দিনে সম্পদশালী উলামায়ে কেরাম স্থানীয় অভাবগ্রস্ত উলামায়ে কেরামের পাশে দাঁড়াতে পারেন। এবং সেটি কোনোভাবে দান সদকা হবে না। সেটি হবে সাধারণ হাদিয়ার মতো।

তবে ট্রাস্ট গঠনই চিরস্থায়ী সমাধান নয় বলে মনে করছেন মুফতি এনায়েত। তিনি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, কল্যাণ তহবিল ছাড়াও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষকদের নিয়োগ বিধিমালা তৈরি করা দরকার। একজন শিক্ষক মাদ্রাসায় পড়ান। এটাকে অনেকে চাকরি মনে করেন, আবার অনেকে খেদমত হিসেবে দেখেন। যে যাই মনে করুক আল্টিমেটলি এটা শিক্ষকের রুটি-রুজির উপায়। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার লক্ষ্যে শিক্ষক নিয়োগের সময় তাকে নিয়োগ লেটার দেওয়া হবে। সেখানে সবধরনের সুযোগ সুবিধা ও অসুবিধার কথা উল্লেখ থাকবে। কিছু শর্ত থাকবে যার ব্যত্যয় ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এছাড়াও চাকরি চলাকালে তিনি কী কী সুবিধা তিনি ভোগ করবেন, সেটাও উল্লেখ থাকবে। এভাবে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের নিয়োগ করা হলে এ ধরনের সমস্যা সমাধান সহজ হবে।

-এএ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ