শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


এপ্রিল ফুল: একটি সরল বিশ্বাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মহিউদ্দীন খান তানজীম।।

পহেলা এপ্রিল বিশ্বব্যাপী পালিত হয় April Fool's Day. বহুবছর ধরে এই Prank Day চলে আসলেও কীভাবে, কেন শুরু হয়েছিল এ প্রথাটি- তা অনেকেরই অজানা।

এপ্রিল ফুল'স ডে নিয়ে নানা রকম কল্প-কাহিনী থাকলেও,এটি একটিAnti-Muslim(মুসলিম বিদ্বেষী) কাহিনী হিসেবে উপমহাদেশের মুসলিমপ্রধান সমাজে ব্যাপকভাবে পরিচিত। অতচ ঐতিহাসিকভাবে এর কোনো ভিত্তি নেই।*

১৯৯৭ সালের পর থেকে এর প্রচার ব্যাপকতা লাভ করে।* এ ব্যাপারে answering-islam.org নামের আন্তর্জাতিক গবেষনা সাইটের দাবী হলো,At least since March 1997 the following message continues to be spread around on Muslim mailing lists , newsgroups, and web pages .

অর্থাৎ, "১৯৯৭ সালের মার্চ থেকে বার্তাটি মুসলিম মেইলিং তালিকায় , নিউজ গ্রুপে এবং ওয়েব পৃষ্ঠাগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে।"

.
ইসলামী জীবনবিধানে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত নয়,এমন কোন দিনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া বৈধ না।চাই সেটা Valentine's Day হোক, কিংবা Mother's Day বা April Fool's Day হোক।
.
এপ্রিল ফুল নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাহিনী হলো, ১৫৬৪ সালে ফ্রান্স তাদের ক্যালেন্ডার চেঞ্জ করে। এর আগে বছর শুরু হতো মার্চের শেষে। কিন্তু এটা এগিয়ে নিয়ে আসা হয় এবং বছর শুরু করা হয় ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু নতুন এই পরিবর্তন অনেকেই মানতে পারলেন না। তারা এই সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন যে, ২৫ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত তারা আগের মতোই নববর্ষ পালন করবে। কিন্তু যারা পরিবর্তন মেনে নিয়েছে, তারা ওদের সাথে মজা লুটতে চাইলো। যারাই তখন নববর্ষ করতে চাইলো, তাদের পিঠে পেপার ফিশ (Paper Fish) লাগিয়ে দেওয়া হলো। সেই তখন থেকে ভিক্টিমদের বলা হতো Poisson d’Avril বা এপ্রিল ফিশ। এমনকি এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে এই দিনে যারা বোকা হয়,তাদেরকে এ নামেই ডাকা হয়।
.
Anti Muslim কাহিনী হিসেবে আমাদের উপমহাদেশে যেটি প্রসিদ্ধ,সেটি হচ্ছে,’ খ্রিষ্টান সেনাপতি ফার্ডিনান্ড ও তার স্ত্রী ইসাবেলা খ্রিস্টানবাহিনী নিয়ে গ্রানাডা শহরে প্রবেশ করে 'যদি মুসলমানরা মসজিদে ঢুকে তাহলে তাদেরকে হত্যা করা হবেনা ' - বলে ঘোষণা দেয়। নিরস্ত্র মুসলমানরা তখন সরল বিশ্বাসে মসজিদে প্রবেশ করে। অনেকে জাহাজের মধ্যে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে খ্রিস্টানবাহিনী বাহির থেকে প্রতিটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর একযোগে সকল মসজিদে আগুন লাগিয়ে বর্বর উল্লাসে ফেটে পড়ে । আর জাহাজগুলোকে মাঝ দরিয়ায় ডুবিয়ে দেয়া হয়। তখন মুসলিমরা উইপোকার মতো আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। সলিল সমাধি ঘটে।

প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখায় দগ্ধীভূত ৭ লক্ষাধিক অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশুদের আর্তচিৎকারে গ্রানাডার আকাশ-বাতাস যখন ভারী ও শোকাতুর হয়ে উঠেছিল, তখন হিংস্রতার নগ্নমূর্তি ফার্ডিন্যান্ড আনন্দের আতিশয্যে স্ত্রী ইসাবেলাকে ক্রূর হাসি হেসে বলতে থাকে, “Oh! Muslim! How fool you are!”

যেদিন এই হৃদয় বিদারক, মর্মান্তিক ও লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছিল, সে দিনটি ছিল ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল। সেদিন থেকেই খ্রিস্টান জগৎ প্রতি বছর ১ এপ্রিল সাড়ম্বরে পালন করে আসছে April fools’ Day তথা ‘এপ্রিলের বোকা দিবস’ হিসেবে।" ***

.বাস্তবতা হলো, স্পেনে মুসলিমদের উপর অমানসিক অবর্ণনীয় অত্যাচার চালানো হয়েছিল এবং সেসব ঘটনা ভালোমতোই আছে ইতিহাসে। কিন্তু মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান কোনো অথেন্টিক ইতিহাসের বইতেই এ কাহিনীটি নেই। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।

.A history of Medieval Spain বই থেকে উদ্ধৃত করলে, “১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি ইসাবেলা আর ফার্ডিনান্ড গ্রানাডায় প্রবেশ করে। তারা সেদিন গ্রানাডার শাসক দ্বাদশ মুহাম্মাদের কাছ থেকে গ্রানাডার চাবি নিয়ে নেন।”।

চিন্তা করে দেখুন তো, যেখানে কুরআন-হাদীসে নির্দেশ এসেছে "কোন সংবাদ শুনলে সেটাকে ভালরূপে যাচাই করতে ধারণাপ্রসূত কথা না বলতে।কেননা ধারণাপ্রসূত কথা মিথ্যার সমতুল্য,সেখানে আমরা এ রকম ভিত্তিহীন কাহিনী বিশ্বাস করে, প্রচার ঘটিয়ে, নিজেরাই Fooled (বোকা) সেজে বসে আছি কী-না?

লেখক: ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকার তাকমিলের শিক্ষার্থী


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ