শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


অন্ধকারে আলোর মিনার: তসলিমা নাসরিনের ভাতিজা সাফায়েতের গল্প

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুজীব রহমান ।।

গত ২৮ ডিশেম্বর নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন তার পরিবারকে নিয়ে ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি দুদিন যাবত খুব আলোচিত ও সমালোচিত। সেই পোস্টে তসলিমা নাসরিন তার পরিবারের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘যে বাড়িতে আমি বড় হয়েছি সে বাড়িটি ছিল একটি ধর্ম নিরপেক্ষ বাড়ি। আমার ভাই বোনেরা সবাই নাস্তিক ছিল। ভাইয়েরা গিটার, হারমোনিয়াম,বেহালা বাজাতো। বাসায় শুধু মা একাই নামাজ পড়তো। মার নামাজ নিয়ে বাবা, আমরা ভাই বোনেরা খুব হাসা হাসি করতাম।’

‘আমাদের বাড়িটির নাম ছিল অবকাশ। আমাদের সেই অবকাশ আর আগের অবকাশ নেই। আমাদের সেই অবকাশ এখন আর আর আগের অবকাশ নেই। সেই অবকাশ এখন কুরআন হাদীস আর নামাজ রোজার অবকাশ।তা রা শহরে একটি দোকান খুলেছে, সেই দোকানে তারা বিক্রি কুরআন হাদীসের বই।’

এই পোস্টের দ্বারা তসলিমা নাসরিন তার আপন ভাতিজা সাফায়েত উল কবীর সৌখিনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। সাফায়েত উল কবীর পেশায় একজন ডাক্তার।২০০৮ সালে ময়মনসিংহের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ইন্টার পাস করে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে।

২০১৫ সালে এমবিবিএস শেষ করে আইসিডিডিআরবি ঢাকা নামক একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতালে। এরপর ২০১৮ সালে তার বাবার মৃত্যু হয়। তার বাবার মৃত্যুই মূলত তার জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তখনই তার জীবনে ব্যপক পরিবর্তন আসে।

তিনি বলেন, ‘বাবার মৃত্যু আমার মনে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। আগে মাঝে মাঝে জুমার নামাজ পড়তাম। তার মৃত্যুর পর নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করলাম। দাড়ি রেখে দিয়ে ইসলামের সব হুকুম-আহকাম মানতে শুরু করলাম। এজন্য প্রথমদিকে অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে যেমন কষ্ট করতে হয়, আশপাশের মানুষের নানারকম কথা শুনতে হয়, আমার ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে।’

‘তখন থেকে ধর্মীয় বইপত্রও পড়া শুরু করলাম। ফেইসবুকে বইয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ইসলামি বই সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ময়মনসিংহের বিভিন্ন লাইব্রেরিতে কিনতে যেতাম। কিন্তু আমার পছন্দের বইগুলো সেখানে পাওয়া যেত না। তখন রকমারি ও অন্যান্য বুকশপ থেকে সেগুলো কুরিয়ারে নিয়ে আসতাম। এর মাঝেই আম্মাকে নিয়ে ওমরায়োে চলে গেলাম।তাবলীগেও কিছু সময় লাগালাম।’ বললেন সাফায়াত।

ওমরা থেকে এসে ময়মনসিংহ জিলাস্কুল রোডের বিপরীত পার্শ্বে আলহিদায়াহ্ শপ নামে একটি লাইব্রেরী দেন ডাক্তার সাফায়েত। জেলাস্কুল মোড় হচ্ছে ময়মনসিংহ শহরের একটি ব্যস্ততম মোড়। চারদিকের মানুষ এদিক দিয়েই শহরে প্রবেশ করে। শতরকমের ব্যস্ততা নিয়ে শহরের এদিক থেকে ওদিকে মানুষের ছোটাছুটি। এত ব্যস্ততার মাঝেও সাম্প্রতিক মানুষের নজর কেড়ে ফেলে তার দৃষ্টিনন্দন লাইব্রেরিটি।

লাইব্রেরিটিতে স্থান পেয়েছে দেশের স্বনামধন্য ইসলামি প্রকাশনাগুলোর নির্বাচিত সব বই। তিনি আলহিদায়াহ্ শপের যাত্রা শুরু করেছিলেন চলতি বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে। এ অল্প সময়ের মাঝেই লাইব্রেরিটি লাইটিং, ডেকোরেশন ও সৃজনশীল-মননশীলতার কারণে ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহের বাইরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সারি সারি সাজানো নির্বাচিত বইয়ের পাশাপাশি ভালো মানের সুগন্ধি, আরবীয় খেজুর, বিশুদ্ধ মধু, কোরআনে বর্ণিত জয়তুন ও ত্বিন ফলের কারণে পাঠক, ক্রেতার মুগ্ধতার যেন শেষ নেই!

[caption id="attachment_175956" align="alignleft" width="300"] বই কিনতে ক্লিক করুন[/caption]

গত কয়দিন আগে লাইব্রেরিতেই কথা হয় কলেজপড়ুয়া এমন এক মুগ্ধ ক্রেতার সঙ্গে। ‘প্রতিদিন এদিক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় লাইব্রেরিটির দিকে দৃষ্টি পড়ে। আজ ভেতরে চলেই এলাম। এখানে নানা ধরনের ইসলামি বইপত্র দেখে খুব বিস্মিতই হয়েছি। কারণ ইসলামি বইপত্র বলতে আমার ধারণা ছিল নামাজ শিক্ষা, মাসআলা মাসায়েল, আর দোয়া-দরুদের বইগুলো। এর বাইরেও যে ইসলামি সাহিত্য ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে এখানে এসে তা বুঝতে পারলাম।’

সেদিন কথা হয় আরেকজন ক্রেতা রাফাতের সঙ্গে। রাফাত বলেন, ‘আমি নিয়মিতই ইসলামি বই কিনি। কখনও নিজের জন্য, কখনও আমার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের জন্য। অন্যান্য লাইব্রেরিতে পাঠ্যপুস্তক আর পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বইগুলো একসঙ্গে থাকে। সেখানে নিজের পছন্দের বইগুলো অনেক সময় খোঁজে পাই না। বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত খরচ দিয়ে পছন্দের বইগুলো তখন ঢাকা থেকে কুরিয়ারে নিয়ে আসতে হয়। এখানে আমার পছন্দের সব বই একসঙ্গে দেখতে পাচ্ছি। এত সুন্দর সুন্দর বই দেখে খুব আফসোসও হচ্ছে, কোনটা রেখে কোনটা আগে কিনব ভেবেই পাচ্ছি না!’

তসলিমা নাসরিন তার সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন নাস্তিক্যবাদের প্রচার প্রসারে। তার যেই ঘরে একসময় গান বাজনা আর ডোল তবলা বাজত, সেই ঘরে এখন নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত আর রব্বে কারীমের জিকির হয়।তসলিমা কি কোন দিন এমনটা ভেবেছিল?

এভাবেই আল্লাহ চক্রান্তকারীদের চক্রান্তগুলোকে নস্যাৎ করে দেন। যারা সত্যের বাতিকে নিভিয়ে দিতে চায় তাদের মুখই কেবল পুড়ে যায়। সত্যের বাতিকে কখনো নিভাতে পারে না। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে ফেরাউনের ঘরে মুসাকে প্রেরণ করেন।

লেখক: সাথী, শিকড় সাহিত্য মাহফিল। 

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ