শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনা; হাইয়াতুল উলইয়ার অগ্রগতি কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মদ
যুগ্ম বার্তা সম্পাদক

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন অনেকদিনের। দাওরায়ে হাদীস (তাকমিল) জামাতকে সরকারিভাবে মাস্টার্সের সমামনা দেয়ার পর সেই চাহিদা বেড়ে গেছে আরও কয়েকগুণ।

বিশেষ করে কওমি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন জুড়ে আছে দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার তীব্র ইচ্ছা। কিন্তু ছাত্র হিসেবে বৈধভাবে দেওবন্দ বা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের।

তারা যেন দারুল উলুম দেওবন্দসহ দেশের বাইরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি হতে পারে, এজন্য চলতি বছরের ১৭ মার্চ কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ ৬ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ একটি সাব-কমিটি গঠন করে।

এই কমিটির অধীনে কওমি শিক্ষার্থীদের ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ সহজিকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সেসময় জানানো হয়। এদিকে কওমি মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ সমাপ্ত হয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে চলেছে। ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের ভর্তিও রমজানের পরবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। কিন্তু, সেই কমিটির অধীনে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

কওমি মাদরাসার পরীক্ষা ও রমজান চলে আসায় কমিটি কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানান সাব কমিটির অন্যতম সদস্য ও দেশের সর্ববৃহৎ কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা কোন মিটিং করতে পারিনি। প্রাথমিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে।” তবে সেই এগিয়ে রাখাটা, এখনও দৃশ্যমান হয়নি।

কওমি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়ার শাইখুল হাদিস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক আল্লামা ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ। তিনিও এ বিষয়ে হতাশায় ভুগছেন বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন।

ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে তেজগাঁও রেলওয়ে জামিয়া ইসলামিয়ার মুহতামিম মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা ওমর ফারুক আমাকে এ ব্যাপারে অনেক সহায়তা করেছেন ”

তিনি বলেন,  “আমরা বিগত ১৬ মার্চ ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব মো: আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি সমাধানের জন্য লিখিত আবেদন জানিয়েছি। তারা আমাদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন যে কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ সহজিকরণের লক্ষ্যে সব ধরণের সহায়তা করবেন।”

“কিন্তু এর পরই বিভিন্ন পত্রিকায় হাইয়াতুল উলয়া থেকে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটি গঠনের কথা জানতে পারি। এ কমিটি করে তারা আমাদের সামনে একটি বাধার দেয়াল খাঁড়া করে দেন। আমরা যেন প্রতিনিধিত্বসুলভ আচরণ না করতে পারি, এ কারণেই মূলত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু তারা তো কোন কাজও করছেন না আবার আমাদেরও কোন কাজ করতে দিচ্ছেন না। তবুও আমরা এ ব্যাপারে এখনও তদবির চালিয়ে যাচ্ছি।” বললেন মাওলানা মুশতাক আহমদ।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক হাইয়াতুল উলয়া কর্তৃক গঠিত কমিটির অন্য এক সদস্য বলছেন ভিন্ন কথা। তার বক্তব্য, “শিক্ষার্থীদের দেওবন্দের ভিসার জন্য আবেদন করতে বলা হয়। আবেদন করার পর কী কী প্রতিবন্ধকতা সামনে আসে সে ব্যাপারেও জানাতে বলা হয়। কিন্তু কোন ছাত্র এ ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মূলত এ কারণেই সাব-কমিটির কাজের অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।”

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের দেওবন্দে পড়ার তীব্র আগ্রহ থাকলেও মৌলিক একটি সমস্যার কারণে ভারতীয় হাইকমিশন তাদের ভিসা দিতে পারছেন না বলে জানা যায়। বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দ কর্তৃক সরাসরি এডমিশনের কোন ব্যবস্থা নেই। তারা শুধু ভিসা পেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা এনওসি দিয়ে থাকে।

যারা বাবার নাম, ডাকঘরের পূর্ণ ঠিকানা, পাসপোর্টের কপি, দারুল উলম দেওবন্দে যে ক্লাসে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তার তথ্য ইত্যাদি সরবরাহ করলে এনওসি পাওয়া যায়। পরে দেওবন্দে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই পড়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। সরাসরি এডমিশন বা সেখানে গেলে দেওবন্দ তাদের ভর্তি নিশ্চিত করবে এমন কোন নিশ্চয়তা দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দেওয়া হয় না। মূলত এ সমস্যাটির কারণেই ভারতীয় দূতাবাস দেওবন্দ পড়তে ইচ্ছুক ছাত্রদের ভিসা দিতে পারে না।

এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য হাইয়াতুল উলয়াকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে জানান ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ। তিনি বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাই-কমিশনের সঙ্গে এই কমিটি বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে পারে। এরপর তারা দেওবন্দ গিয়ে ছাত্রদের পড়ার আগ্রহটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। পরে বাংলাদেশেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেওবন্দ পড়তে আগ্রহীদের এডমিশন নিশ্চিত করার অনুমদোন আনতে পারেন। তাহলে এ দেশের হাজারো কওমি শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়ার সুযোগ পাবে।”

উল্লেখ্য,গত (১৭ মার্চ) জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসায় ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ ৬ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ একটি সাব-কমিটি গঠন করেছে।

কমিটির সদস্যরা হলেন- ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও হাইআতুল উলইয়ার সদস্য আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, গহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমিন, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা নুরুল আমিন, আরজাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হক, আফতাবনগর মাদরাসার মাওলানা মোহাম্মদ আলী।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ