মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫


'রমজানের বরকত লাভে সুন্নতের অনুসরণ জরুরি'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ
আলেম, লেখক ও গবেষক

রাসুল সা. রমজান শুরু হওয়ার অন্তত দু’মাস পূর্ব থেকে রোজার প্রস্তুতি নিতেন। শুধু নিজে প্রস্তুতি নিতেন এমন নয় বরং নিজের পরিবারকে প্রস্তুত করতেন, সমাজকে প্রস্তুত করতেন। নামাজ, দোয়া ও মজলিস সব জায়গায় রমজানের একটা আবহ, একটা পরিবেশ তৈরি করতেন। রমজানের গুরুত্ব আর মাহাত্ম সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেন।

আর রজব মাস থেকেই বেশি বেশি এ দোয়া পাঠ করতেন।

اللهم بارك لنا في رجب وشعبان . وبلغنا رمضان

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমাদের হায়াতকে রজব ও শাবান পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দাও। আর আমাদের রমজান নসীব করো।

এই দোয়া নিজে বেশি বেশি পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রা. পড়ার জন্য তালিম দিতেন।

আর সাহাবায়ে কেরাম রা. কে বলতেন, রোজা আসছে। নাজাতের মাস আসছে। সবাই বেশি করে রমজান পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধির দোয়া করো। মোটকথা আল্লাহর রাসুল সা. রমজান কেন্দ্রিক একটা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেন।

যে ব্যক্তির মধ্যে রমজান মাসের বরকত লাভের পিপাসা থাকে, সেই ব্যক্তিই ভালোভাবে এ মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। কারও অন্তরে পিপাসা না থাকলে রমজানের বরকত আহরণ করতে পারবে না।

নবি করিম সা. রমজানের বরকত সবার আগে নিজে লাভ করতে চাইতেন, পরে সাহাবায়ে কেরামকে রা. আহ্বান করতেন। যারা রমজানের পূর্ণ বরকত আহরণ করতে চায়, তাদের মনে একটা পিপাসা থাকতে হবে।

একটা প্লানিং থাকতে হবে। মনে মনে চিন্তা করতে হবে রমজান আসছে। রমজান উপলক্ষে কী কী কাজ আমি করব, কোন কাজে বেশি নেকি লাভ করা যাবে, আগে থেকে এসব পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। রমজান মাসে নিজেকে প্রলুব্দ বানানো, আমলের নিয়তে নিজের ভিতরে একটা পরিবর্তন আনতে হবে।

সাহাবায়ে কেরাম রা. এর অভ্যাস ছিলো, প্রত্যেকটা বিষয়ের ফাজায়েলের ওপরে নিজেকে সংযোগ রাখা। ফজিলতের কোনো বিষয়কে কখনো তারা ছাড়তেন না। ফজিলত সম্পর্কে সব সময় হৃদয়ে একটা আগ্রহ রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম রা. হাদিসে যে সকল ফাজায়েলগুলো আসছে সেসব নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতেন। পরস্পরে মুযাকারা করতেন। রমজানের পরিপূর্ণ বরকত লাভে সুন্নতের অনুসরণ করা অনেক জরুরি।

এখানে মোট তিনটি বিষয়- 

১. সাধারণ রোজা: অর্থাৎ, রোজা হলো আবহমানকালীন ধর্মীয় একটি অংশ। পৃথিবীতে যতদিন থেকে ধর্ম পালনের রেওয়াজ চলে আসছে, ততদিন থেকে রোজাও আছে। অর্থাৎ রোজা হলো ধর্মের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ।

২. রমজানের রোজা: এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون.
অর্থ : তোমাদের উপর রমজানের রোজাকে ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিলো। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।

রমজানের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, الصوم لي وانا اجزي به.
অর্থ : রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। অর্থাৎ রোজা এমন একটি আমল যা আল্লাহর অতি নিকটে নিয়ে যায়। রোজার দ্বারা বান্দাহ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করে।

৩. রমজানের প্রস্তুতিমূলক প্লানিং:সাহাবায়ে কেরামের মাঝে রমজান এলে রোজার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা লেগে যেতো। কারণ রোজার ফজিলতের প্রভাব সৃষ্টি হয়েছিলো তাদের অন্তরে।

রোজার প্রভাব এমনভাবে বিস্তৃত হয়েছিলো যে, হযরত আবু উমামা রা. সারাবছরই রোজা রাখতেন। রাসূল সা. খুব জবরদস্তি করে বললেন, আবু উমামা! তুমি সারাবছর রোজা রেখো না। তখন আবু উমামা রা. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি পারি। আর এ নিষেধটি ছিলো শাফকাতের নিষেধ। অর্থাৎ এটা উম্মতের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তারপর থেকে যেদিন আবু উমামার বাড়িতে মেহমান আসতো। সেদিন বাড়িতে চুলা জ্বলতো। মেহমান না এলে তিনি রোজা রাখতেন।

আবার কিছু সাহাবী ছিলেন, যারা অর্ধ বছরের বেশি রোজা রাখতেন। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.। আল্লাহর রাসূল তাকে নিষেধ করলেন, তুমি সারা বছর রোজা রেখো না। এটা তুমি সামাল দিতে পারবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি টগবগে যুবক। আমি পারবো।

যদিও বৃদ্ধ বয়সে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর খুব আফসোস করে বলেছিলেন। আল্লাহর রাসূল আমাকে নিষেধ করেছিলেন সারাবছর রোজা রাখার ব্যাপারে। আমি সেটা মেনে গেলে অনেক ভালো হতো। বৃদ্ধ বয়সে এসে এত অচল হয়ে যেতাম না।

রমজান ইবাদাতের মাস। কুরআন নাযিলের মাস। এ মাসে সবার জন্য বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা জরুরি। রাসূল সা. রমজান এলে হযরত জীবরাঈল এর সাথে দাওর করতেন। খুব বেশি তেলাওয়াত করতেন। পুরো সময়টা তেলাওয়াতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন।

‘তারাবি পড়ানো’ রমজানের বিষয় নয় বরং ‘তারাবি পড়া’ হলো রমজানের বিষয়। তবে রমজানে তারাবি পড়াতে পারা অনেক বড় ভাগ্যের বিষয়। কারণ আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রমজানে যারা কুরআনুল কারিম তারাবিতে খতম করেন, তাদের হেফজ অনেক ইয়াদ থাকে। সারা বছরের জন্য অনেক বড় অবলম্বন হয়ে যায়। তারাবি ছুটে গেলে ঐ হাফেজ তার হেফজকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারেন না।

রমজানে যারা হাফেজ নয় তারা তাদের সাধ্যমতো তেলাওয়াত করবে। আর যারা হাফেজ তারা বেশি পরিমাণ তেলাওয়াত করবে।

শ্রুতিলিখন : মোস্তফা ওয়াদুদ

আরএম/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ