বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


তাবলিগ নিয়ে মাওলানা রাবে হাসানি নদভীর বক্তব্যে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: তাবলিগ জামাতের চলমান সঙ্কট নিরসনে ভারতের বিশিষ্ট আলেমে দীন মাওলানা রাবে হাসানি নদভির একটি বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই অডিও বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে তিনি তাবলিগের দ্বন্দ্ব নিরসনে সবার প্রতি উদাত্ত্ব আহবান জানিয়েছেন।

তবে ওই অডিও বার্তার পর ‍আরেকটি অডিও ইউটিউবে ছড়িয়েছে যাতে তিনি এমন কোনো বক্তব্য দেননি বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা নির্ধারণ করতে পারছেন না শ্রোতারা। তবে প্রথম অডি বার্তার কমেন্টে অনেক শ্রোতাই এটাকে ফেক বলেছেন।

মাওলানা রাবে হাসানি নদভি ভারতের মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মাওলানা আবুল হাসান নদভি রহ. এর ভাগিনা। এ কারণে ছড়িয়ে পড়া অডিওটি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

একুশে বইমেলা ২০১৮ সব বই দেখতে ও কিনতে ক্লিক করুন 

অডিওতে মাওলানা রাসে হাসানি নদভি বলেন, আমার ক্ষুদ্র জীবনে ইসলামি ইতিহাসের যতোটুকু অধ্যয়ন করেছি তাতে দেখা গেছে এমন কোনো যুগ অতিবাহিত হয় নি যাতে উলামায়ে হক ছিলেন না৷ সাথে সাথে উলামায়ে ছু-ও ছিলো৷

উলামায়ে ছু’র দলটি সব যুগেই আহলে হকদের কিছু কথাকে দলিল বানিয়ে উম্মেতের মাঝে বিভাজন তৈরির কাজ করেছে সর্বদাই। অপর দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সিফফিনের যুদ্ধ, উটের যুদ্ধ (জঙ্গে জামাল), হজরত হাসান রা. এর শাহাদাত, তাবে তাবেয়িনদের যুগের বিভিন্ন ঘটনা তারও অনেক পর দারুল উলুম দেওবন্দ, সাহারানপুর মাদরাসা, নদওয়াতুল উলামার দুই টুকরো হওয়া এ সবের পেছনে উলামাদেরই একটি দল কাজ করেছে৷

যারা মূলত উলামায়ে ছু। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ বা মুসলিমদের যে কোনো ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী প্লাটফর্ম ভেঙে দেয়ার জন্য উলামায়ে ছু কাজ করেছে।

যদি দারুল উলুম দেওবন্দের দিকে দেখেন তাহলে সেখানে কিছু অপরিণামদর্শী, কম বুদ্ধির কিছু আলেমের হাত ছিলো। যাদের কারণে দেওবন্দ মাদরাসা দুই ভাগ হয়ে যায়।

সাহারানপুরের মাজাহিরে উলুমেরও একই ইতিহাস। এখানেও একদল আলেম নিজেদের স্থায়িত্ব ও স্বার্থ সিদ্ধির জন্য একে দু টুকরো করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, তাবলিগের আকাবিরদের চিন্তা চেতনায় ভুল ছিলো না। হজরত ইলিয়াস রহ, হজরত শায়খ যাকারিয়া রহ, হজরত এনামুল হাসান রহ. এর মতো বড় বড় আলেম ছিলেন। অপর দিকে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ, হজরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ও মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী রহ. মুফতি কেফায়েতুল্লাহ রহ. সহ বহু আলেম বিদ্যমান ছিলেন৷

বড় উলামার দোয়া ও পরামর্শে আকাবিরে তাবলিগের মেহনতে কাজ আগে বাড়তে থাকে এবং পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে৷

মাওলানা সাদ কান্ধলভি প্রসঙ্গে মাওলানা রাবে হাসানি নদভি ওই ওডিওতে বলেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভি যখন চাইলেন, তাবলিগি জামাত সব রসম রেওয়াজ বাদ দিয়ে, যারা তাবলিগকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে চায় তাদের থেকে দূরে থেকে, এ জামাতকে সামনে এগিয়ে নেবেন তখন কিছু লোক বিরোধিতা শুরু করে দিলো৷

ফলে বর্তমানে সারা পৃথিবীতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে তাবলিগি আর উলামা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। মনে হচ্ছে যেনো আলি ও মুয়াবিয়া রা. এর সেই যুগ এসে গেছে। উভয়ই হকের উপর আছে বলে দাবি করে চলছে।

সে সময়ও হকপন্থী উলামার একটি দল উভয় পক্ষকে একটি সমাধানে আসতে বলে বুঝিয়েছেন তাদের জন্য চেষ্টা করেছেন।

 

তিনি উভয় পক্ষকে আহ্বান করে বলেন, আমাদের সামনে তো ইসলামের শত্রুরা নানা ধরনের ফেতনা তৈরি করে রেখেছে। দিন দিন তাদের ষড়যন্ত্র বেড়েই চলছে। আমরা যদি নিজেদের মাঝে বিরাজমান বিষয় নিয়ে পড়ে থাকি তাহলে দুশমনরা নিজেদের মিশনে কামিয়াব হয়ে যাবে। ইসলাম ও মুসলমান ক্ষতির মধ্য পড়ে যাবে৷

তিনি উভয় পক্ষকে আহ্বান করে বলেন, কোনো দ্বন্দ্ব হলে ইসলামের পদ্ধতি হলো উভয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া। সে জন্য তাবলিগের মুরব্বি ও আলেমদের বসে দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।

এ বক্তব্যের অডিও লিংক

উল্লেখ্য, এ অডিও বার্তায় মাওলানা সাদ কান্ধলভির প্রতি আলেমদের রুজু করার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু আলেমরা তার ব্যাপারে যেসব আপত্তিকর বক্তব্য উত্থাপন করেছেন তার সমাধান কী হবে তা অডিও বার্তায় নেই।

এদিকে অপর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে তিনি উপরের বক্তব্য দেননি বলে অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, যে অডিও বার্তা আমার নামে ছড়িয়েছে এটি সঠিক নয়। তাবলিগের জামাত সংশ্লিষ্ট এমন কোনো বক্তব্য সম্প্রতি আমি দেইনি। নিচে অডিওটির লিংক দেয়া হলো।

তবে সচেতন মহলের পরামর্শ, তাবলিগের চলমান সঙ্কট নিয়ে একটি পক্ষ জলঘোলা করার চেষ্টা করছে। ফলে যে কোনো বার্তা শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ফ্রি সেবা নিয়ে গ্রামে গ্রামে এক মাওলানা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ