শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


রাস্তা দিয়া হাঁইটা চলে রাস্তা হারাইয়া

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ali-abdul-muntakim঳ আলী আবদুল মুনতাকিম

শিরোনামটি সদ্য প্রয়াত অমর কবি সৈয়দ শামসুল হকের একটি জনপ্রিয় গানের পংক্তি। ‘তোরা দেখ-দেখ, দেখরে চাহিয়া, রাস্তা দিয়া হাঁইটা চলে রাস্তা হারাইয়া।’ পরানের গহিন ভিতরের কবির এ অসাধারণ কথা মালায় যাবার আগে আমার ছোট বেলার একটি ঘটনা বললে আশা করি পাঠকের ভাল লাগবে।

স্বাধীনতার পূর্বের কথা। আমার নানা মুন্সী আবেদিন মিয়া আমাকে একটি ধাঁধাঁ জিজ্ঞেস করলেন, বলত নানা ‘যারে তুমি আনতে গেলে, তারে দেখে ফিরে এলে। সে যখন চলে গেল- তারে নিয়ে বাড়ি এলে।’ দীর্ঘক্ষণ মাথা ঘামিয়ে বলতে না পারায় নানাজি বললেন, সেটা হল পানি। তুমি পানি আনতে বের হয়েছ, অমনি বৃষ্টি এল, তুমি ভিজে ফিরে এলে, বৃষ্টি চলে গেলে তুমি পানি নিয়ে বাড়ি এলে।

নোনা পানিতে ঘন্টার পর ঘন্টা সাঁতার কেটে পিপাসার্ত সাতারু নোনা পানি খেতে পারে না। বাইরের জ্বল খেতে হয়। জ্বলে ডুবে থেকে জ্বল খেতে না পারা বা জ্বলে ভিজে জল সংগ্রহ করতে না পারার মধ্যে অনেক চিন্তার বিষয় লুকিয়ে আছে। আমার শ্রদ্ধেয় কবি সৈয়দ হক কত সহজ করে বলে দিয়েছেন রাস্তায় হাঁটছেন যে পথিক সে তার রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। অন্য মানুষদের তা চেয়ে দেখতে বলেছেন। এ জগতে খেলারামেরা খেলে যাচ্ছে পরিণতি বা পরপারের বা পরজীবনের কথা চিন্তা না করেই।

কবির আর একটি বিখ্যাত গান সবাই জানেন, শিল্পি বশির আহমদের কণ্ঠে- ‘হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস, তবুওতো কারওরি নাই একটুখানি হুশ।’ কিছুদিন আগে এক টিভি চ্যানেলে কবির একটি সাক্ষাৎকার প্রচার হয়। উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, পরকাল বা পরজীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কী? কবি তার স্বভাব ভঙ্গীতে যা বলেন তা মোটামোটি এরকম- ‘একটি কাল তো থাকতে হয়, এই যে এত সুবিশাল সৃষ্টি, তার আকর্ষণ, বিকর্ষণ, এত সুন্দর শৃঙ্খলা তা তো এমনি এমনি হয় না, একজন সুপার পাওয়ার আছেন, তাকে আল্লাহ, বিধাতা, গড বা ভগবান যে নামেই ডাকি না কেন! মাঝে মাঝে মনে হয় যেন টচ লাইটের ব্যাটারি, যতক্ষণ চার্জ আছে তো আলো জলল, চার্জ শেষ হলে শেষ।’

স্কুল জীবনে আমার এক শিক্ষক বলতেন- দেখ আমার নিজের পরকাল বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না, কিন্তু মানুষের আচরণ, খুন-রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, হত্যা-ধর্ষণ, অত্যাচার-নির্যাতন দেখলে মনে হয় পরকাল একটা থাকইে হবে। না হয় অসহায় নির্যাতিতরা যে বিচার পাচ্ছে না তার বিচার তো বাকি থাকতে পারে না।

পরকাল নিয়ে আমাদের বর্তমান সমাজে অনেক চিন্তাশীল মানুষ আছেন, যারা অনেকটা সংশয়ে ভোগেন, সংশয়ের কিছু নাই। পরজীবন সম্পর্কে আপনার আমার যত সংশয়ই থাকুক না কেন পরকালে আমাকে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে এবং সকল কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি করতে হবে।

স্কুল জীবনে আমার এক শিক্ষক বলতেন- দেখ আমার নিজের পরকাল বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না, কিন্তু মানুষের আচরণ, খুন-রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, হত্যা-ধর্ষণ, অত্যাচার-নির্যাতন দেখলে মনে হয় পরকাল একটা থাকইে হবে। না হয় অসহায় নির্যাতিতরা যে বিচার পাচ্ছে না তার বিচার তো বাকি থাকতে পারে না। নিরপরাধ নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করে হত্যা করা হল, ধর্ষণকারীকে কেউ ধরতে পারল না। সে বিচার পাবে না? হিটলার লক্ষ লক্ষ খুন করে উধাও হয়ে গেল, তার বিচার হওয়া লাগবে না?

আমরা সেই স্যারকে যুক্তিবাদী স্যার বলতাম। তিনি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতেন আল্লাহর অস্তিত্ব ও পরকালের অস্তিত্ব এবং জবাবদিহিতার বাস্তবতা। শাস্তি ভোগকারীদের বিষয়ে সুরা ইয়াসিনের ৬৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হা-জিহি জাহান্নামুল্লাতি কুনতুম তু’আদুন। এটি সেই জাহান্নাম যে বিষয়ে তোমাদের ভয় দেখানো হয়েছিল।’

লেখক: সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ