শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


ইলমে দীন শাহী ইলম : আল্লামা কাসেমী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

Kasemeeআজ (১৮ জুলাই) জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার সবক উদ্ধোধনীতে গুরুত্বপূর্ণ  এক বক্তব্য দিয়েছেন মাদরাসার মুহতামিম বিশিষ্ট আলেমে দীন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। তার ভাষণটি আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য অনুলিখন করেছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা ওয়াদুদ 

ইলমে দীন হলো শাহী ইলম। যারা ইলমে দীন অর্জন করবে তারা শাহী চিন্তার অধিকারী হবে। পুরো জাতিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে। একজন মুচি জুতা সেরাই করে। সে সর্বদা জুতার চিন্তা নিয়ে থাকে। সে সব সময় মানুষের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চিন্তা এ পরর্যন্তই।

আর কুরআন পুরো জাতির জন্য নাজিল হযেছে। সুতরাং যারা কুরআনের ধারক-বাহক হবে তারা পুরো জাতিকে নিয়ে চিন্তা করবে। কুরআনের শিক্ষা জাতীয় শিক্ষা। আবার কুরআন আল্লাহর পক্ষ হতে নাজিলকৃত ওহী। কুরআন-হাদীসের জ্ঞান যেমন ওহী। তেমনি হাদিসের শিক্ষাও ওহী। তাই ইমাম বুখারী তার কিতাব কিতাবুল ওহী দ্বারা শুরু করেছেন। এই ইলমে দীন ও ইলমে ওহী সবাই অর্জন করতে পারে না।

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন, ‘তিনি যাকে চান তাকে দীনের জ্ঞান দান করেন।’ অতএব তোমরা যারা ইলমে দীন অর্জন করার জন্য এসেছো। নিঃসন্দেহে বলা যায় আল্লাহ তোমাদের পছন্দ করেছেন। নির্বাচিত করেছেন। ভালবেসেছেন। এজন্যই তোমাদের মাদরাসায় নিয়ে এসেছেন। দীনের জ্ঞান শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছেন।

ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কার কি কাজ? শিক্ষকের কাজ হচ্ছে, ছাত্ররা রাসূল সা. এর মেহমান। তারা ইলমে দীন শিখতে এসেছে। উস্তাদদের কাছে তারা নিজেদের জীবনকে সপে দিয়েছে। সুতরাং উস্তাদগণ তাদের দ্বায়িত্বকে কাজে লাগাবে। রাসূল সা. এর মেহমানদের খেদমাত করবে। তাদের ইকরাম করতে হবে। উপকার করতে হবে। তাদের কাছে ইলমের বাণী সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়াই হলো সবচে বড়ো উপকার।

ছাত্রদের কাজ হচ্ছে, তোমরা উস্তাদদের আদব, ইহতেরাম রক্ষা করে চলবে। উস্তাদের সম্মানের দিকে লক্ষ রাখবে। উস্তাদের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকতে। আর ছাত্রদের জন্য ত্যাগ ও কুরবানীর মেজাজ থাকতে হবে। যে ত্যাগ ও কুরবানী করবে। কষ্ট স্বীকার করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহপাক তার রহমতের দরজা খুলে দিবেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘যে চেষ্টা করে আমি তার জন্য অনেক দরজা খুলে দেই।’ সুরা আনকাবুত

যে কোন প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখা ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য যে বিষযটি প্রয়োজন তা হলো প্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতি মেনে চলা। প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষা করা। যখন উস্তাদ-ছাত্রের মাঝে এ কাজগুলো পাওয়া যাবে তখন পড়াশোনায় উন্নতি হবে। ইলেমের মাঝে বরকত হবে।

ছাত্রদের চারটি বিশেষ কাজ করার জন্য ইমাম বুখারী তার রুবায়িয়্যাতে উল্লেখ করেছেন। আওযাজুল মাসালিকে শায়খুল হাদীস জাকারিয়া রহ. ও বুখারীর প্রথম হাদীসে একই কথা মুরাদ নিয়েছেন। বিষয় চারটি হলো ১. রেজায়ে মাওলা। ২. ইলম অনুযায়ী আমল। ৩. বক্তৃতার মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেযা। ৪. লেখনির মাধ্যমে সারাবিশ্বে প্রচার করা।

ইলম অর্জনের জন্য একাগ্রতা প্রয়োজন। একাগ্রতার সাথে যদি ইলম অর্জন করি তাহলে ইলেমের মাঝে বরকত হবে। রাসূল সা. জাবালে হেরায় অবস্থান করেছেন। একাগ্রতা ইনহিমাকের সাথে তিনি আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। জাবালে হেরা মক্কা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে । সেখান থেকে মক্কা দেখা যায়। ইরশাদুল মুলুক গ্রন্থে রয়েছে নবী করীম সা. সেখাসে ১৫ বছর অনস্থান করেছেন। অনেকে আরো কমবেশিও উল্লেখ করেছেন। তবে যাই হোক মূল কথা হলো ইলম অর্জনের জন্য ইনহিমাক জরুরি।

বর্তমানে ছাত্রদের জন্য একটি বড়ো ফেতনা হলো মোবাইল-ফোন। এই মোবাইল ফোন- ছাত্রদের জীবনকে নষ্ট করে দিচ্ছ। সুতরাং প্রতিটি তালিবুল ইলমকে নিজের থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যতদিন পর্যন্ত রুসমি তালিবুল ইলম থাকবো। ততদিন পর্যন্ত মোবাইল-ফোন ব্যবহার করবো না। ফারাগাতের আগ পর্যন্ত মোবাইল হাতে না নেয়ার সংকল্প করতে হবে। তাহলেই সফলতা ছাত্রদের পদচুম্বন করবে।

দুনিয়াতে সম্মান পেতে চাইলে মা বাবার খেদমাত করা। আর ইলম থেকে উপকৃত হতে চাইলে উস্তাদের আদব ইহতেরাম করা। সুতরাং উস্তাদের ইহতেরাম করতে হবে। তাহলে ইলম থেকে উপকৃত হওয়া যাবে। উস্তাদের পাশাপাশি কিতাবের ইহতেরাম করতে হবে।

আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. কিতাবের এতো ইহতেরাম করতেন যে তিনি নিজে ঘুরে ঘুরে হাশিয়া মোতালায়া করতেন। ইলম আসবে তাকওয়া দ্বারা। কারণ ইলম হলো নূর। এই নুর পবিত্র পাত্রে রাখতে হবে। অপবিত্র পাত্রে এই ইলমের কোনো স্থান নেই। সুতরাং গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। গুনাহের কাজ সম্পৃক্ত হলে সঠিক ইলম অর্জন করা সম্ভব হবে না।

আশরাফ আলী থানভী রহ. বলেন, ছাত্রের দিন কাজ। আর উস্তাদের দুই কাজ। ছাত্রের কাজ হলো- ১. ছহীহ ইবারাত। ২. ছহীহ তরজমা করা। ৩. ছহীহ মতলব বুঝা।

এজন্য ছাত্রদের মেহনত বেশি করতে হবে। কিতাবের প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে। অনেকে প্রশ্ন করে ইবারাত ছহী কিভাবে করবো? এর উত্তর হলো নাহুমীর কিতাবে একটি ইবারাত আছে। যাতে চারটি বিষয় রয়েছে। কেউ যদি এই ইবারাতের প্রতি লক্ষ রাখে তাহলেই সে ইবারাত হল করতে পারবে। কাজ চারটি হলো- ১. ইবারাতে দেখতে হবে কোনটা ইসম, কোনটা ফে'ল ও কোনটা হরফ। ২. মুরাব না মাবনী তা লক্ষ করতে হবে। ৩. আমেল না মামুৃল। তা নির্ণয় করতে হবে । আমেল ১০০ টি। মামুৃল ২৭ প্রকার। এগুলো ভালো করে বুঝে নিতে হবে। ৪. মুসনাদ ও মুসনাদ ইলাহী ঠিক করা।

এই চারটি বিষয় ঠিক হয়ে গেলে ইবারাত ছহীহ হয়ে যাবে। আমরা এখানে বনার (গঠন হওয়া) জন্য আসছি। বনতে হলে আসাতিযায়ে কেরামের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী বনতে হবে। এখানে একদল আছে গড়ার জন্য। (উস্তাদগণ) আরেকদল আসছে বনার জন্য। (ছাত্রবৃন্দ)। আমাদের আসাতিয়ায়ে কেরাম ইলমি ভাবেও গড়বেন। আমলি ভাবেও গড়বেন। আমাদের উচিত আসাতিযায়ে কেরামের কদর করা। তাদের যথাযথ সম্মান করা।

আমরা যারা বারিধারা মাদরাসায় আছি আমাদের অবাধ বিচরণের সুযোগ নেই। বারিধারা এলাকা হলো বড়ো স্পর্শকাতর এলাকা। বিশেষ করে রমজানে দূর্ঘটনা ঘটার পর থেকে। সুতরাং আমরা যারা আছরের পর তাফরিয় করবো। তারা বারিধারা নতুন বাজার থেকে পূর্ব থেকে সোজা একটি রাস্তা গেছে। রাস্তাটি প্রায় ছয় কিলোমিটার। আমরা সে রাস্তায় তাফরি'য় করতে পারি। একান্ত কোনো প্রয়োজন ছাড়া বারিধারার ভিতরে ও গুলশান এলাকায় যাবো না। যে কথাগুলো বলা হলো আল্লাহপাক এর উপর আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম /আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ