শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


‘সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এই শিক্ষাআইন চলতে পারে না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

alamin2 copy[নূরুল ইসলাম আল আমিন। ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি। সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য। শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন দেশের বৃহৎ ইসলামি দলগুলো মধ্যে অন্যতম ছাত্র সংগঠন। সংগঠনটির শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। ইসলামি বিভিন্ন ইস্যুতে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চলমান শিক্ষাআইনের বিরুদ্ধে তারা শুরু থেকেই সোচ্চার। আন্দোলনকে বেগমান করতে গঠন করেছেন সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্য। বিষয়গুলো নিয়ে শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি, সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল ইসলাম আল আমিনের সে কথা বলেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাব এডিটর মুহাম্মদ এহসানুল হক।]

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের এই ঐক্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলুন, কেন আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উদ্দেশ্য একটাই। শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখা। আর কিছু নয়। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এই দাবি আদায় করতে চাই।

আওয়ার ইসলাম : শিক্ষানীতিতে মৌলিকভাবে কী কী ক্রটি আছে বলে মনে করেন?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : অসংখ্য ত্রুটি রয়েছে, কয়টা বলবো। পাঠ্যপুস্তক থেকে ধর্ম সংক্রান্ত লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। নবিজি সা. এর জীবনী ও খোলাফায়ে রাশেদিনের জীবনীগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। মুসলিম কবিদের কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। যেমন কাদের নেওয়াজের কবিতাটি বাদ দেয়া হয়েছে। ড. শহিদুল্লাহর সততার পুরষ্কার কবিতাটিও বাদ দেয়া হয়েছে। এজাতীয় আরও অনেক কিছু উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে অনৈসলামি বিভিন্ন লেখা পাঠ্যপুস্তকে ঢোকানো হয়েছে। যেমন একটা কবিতা ঢোকানো হয়েছে যার নাম হলো বই। এই কবিতার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে পবিত্র কুরআনে পাঠে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এরপর কোচিং টিউশনি এসব বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষকের চাহিদা পূরণের কোনো কথা বলা হয়নি। এরপর শিক্ষকের পক্ষ থেকে ছাত্রের ওপর চাপ প্রয়োগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসছে। এতে করে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়গুলো শুধু মাদরাসার নয় স্কুল-কলেজ সবার জন্যই সমস্যা। এমনিভাবে মাদরাসার নিবন্ধনের কঠিন শর্ত করা হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : আচ্ছা মাদরাসাগুলো নিবন্ধন করলে সমস্যা কী?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : একটা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে হলে তাকে একটা পর্যায়ে যেতে হয়। কিন্তু দেশের আনাচে কানাচে খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে অনেক মসজিদ ভিত্তিক ছোট ছোট মাদরাসা রয়েছে। সেগুলো দ্বারা জাতি ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে। স্কুলের ছেলেরাও একবেলা পড়ে কুরআন শিখছে। কিন্তু এখন যদি তাদেরও নিবন্ধন লাগে তাহলে দেখা যাবে নিবন্ধনের নানান শর্তের বেড়জালে পরে অনেক মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এরপর বলা হয়েছে নিবন্ধন করার পর তারা যে পাঠ্যপুস্তক দিবে তাই পড়াতে হবে। না পড়ালে জরিমানা হবে, অথবা কারাদণ্ড হবে। এজাতীয় আরও অনেক সমস্যা রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের দাবিগুলো কী কী?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : আমাদের দাবি পাচঁটি। ১. শিক্ষানীতি-২০১০ এবং তা বাস্তবায়নে প্রণীত শিক্ষা আইন-২০১৬ এর খসড়া অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরে ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৩. শিক্ষা আইন ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কার্যক্রমে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষাবিদ এবং ইসলামি স্কলারগণের পরামর্শ নিতে হবে। ৪. পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক গল্প, প্রবন্ধ ও কবিতা বাদ দিতে হবে। ৫. শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্ততে মুসলিম ঐতিহ্য ও ভাবধারার কবি সাহিত্যিকদের গল্প ও কবিতা অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।

[caption id="attachment_1420" align="alignleft" width="329"]alamin3 পাঠ্যপুস্তক থেকে ধর্ম সংক্রান্ত লেখা বাদ দেয়া হয়েছে। নবিজি সা. এর জীবনী ও খোলাফায়ে রাশেদিনের জীবনীগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। মুসলিম কবিদের কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। যেমন কাদের নেওয়াজের কবিতাটি বাদ দেয়া হয়েছে। ড. শহিদুল্লাহর সততার পুরষ্কার কবিতাটিও বাদ দেয়া হয়েছে।[/caption]

আওয়ার ইসলাম : কোন কোন সংগঠন রয়েছে আপনাদের জোটে?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : মোট আট দল মিলে গঠিত হয়েছে সর্বদলীয় ইসলামি ছাত্র ঐক্য। আমাদের এই জোটে থাকা সংগঠনগুলো হচ্ছে, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র জমিয়ত, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইসলামী ছাত্র খেলাফত, ইসলামী ছাত্র সমাজ, জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়া, আঞ্জুমানে তালামিযে আরাবিয়া ও বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলন।

আওয়ার ইসলাম : আর বাকি ইসলামি দলগুলো কেন নাই?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : আমরা অন্য দলগুলোকেও দাওয়াত করেছি। আমরা চাই অন্যরাও আসুক। অনেকের সাথে কথাও হচ্ছে। আশা করছি আরও কয়েকটা সংগঠন আমাদের সাথে যোগ দিবে।

আওয়ার ইসলাম : আপনাদের এই জোটে ছাত্রশিবির নেই কেন?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : আসলে আমরা যে কয়টি সংগঠন এখানে একত্রিত হয়েছি সবগুলোই প্রায় সমমনা সংগঠন। কিন্তু ছাত্র শিবিরের সাথে আমাদের একটা দূরত্ব আছে। তারা ক্ষমতার রাজনীতিতে বেশি এ্যাকটিভ। তা ছাড়া আকিদাগত কিছু বিষয়ে তাদের সাথে আমাদের মতপাথর্ক্য আছে। তাই তারা আমাদের এই জোটে নেই।
আওয়ার ইসলাম : আপনাদের পৃষ্ঠপোষক কারা?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : আমাদের কোনো আলাদা পৃষ্ঠপোষক নেই। আমাদের সবারই মুরুব্বি সংগঠন আছে। উনারা মাঝে মধ্যে আমাদের পরামর্শ দেন। এর চেয়ে বেশি কিছু না।

আওয়ার ইসলাম : কেউ কেউ বলেন আপনাদের এই জোটের পেছনে সরকারের ইন্ধন আছে, এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : এটা একেবারেই ভুল কথা। আমাদেও পেছনে সরকারের ইন্ধন কেন থাকবে। আমাদের এই আন্দোলন তো সরকারের বিরুদ্ধেই। এর পিছনে সরকারের হাত থাকবে কেন। এটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার।

আওয়ার ইসলাম : এমনকি হতে পারে না, দেশে শিবির ছাড়াও আরও ইসলামি ছাত্র সংগঠন আছে এইটা দেখানো উদ্দেশ্য?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : না না। এমন বিষয় এখানে নেই। আমরা শুধুমাত্র একটা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আর আমাদের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে। আমরা কারো জন্য ব্যবহৃত হবো না।
আওয়ার ইসলাম : আগে কখনো ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে আপনাদের দেখা যায়নি, এবার কেন?

নূরুল ইসলাম আল আমিন : আমরা কোনো ঐক্যে ছিলাম না এটা ঠিক আছে। কিন্তু ২০১১/১২ এর দিকে যে ইসলামী ছাত্র ঐক্য হয়েছিল, আমরা সেখানে ছিলাম। কিন্তু সেটা বেশি দিন অ্যাকটিভ ছিল না। তেমন কোনো প্রোগ্রাম করা হয়নি এক সাথে। তবে আমরা ছিলাম সেখানে। এবারই প্রথম ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, বিষয়টা এমন নয়।

আওয়ার ইসলাম : আপনারা কি শতভাগ মূল সংগঠনের নির্দেশে চলেন, না স্বাতন্ত্র রেখে?
নূরুল ইসলাম আল আমিন : আমরা স্বতন্ত্র সংগঠন। কারো কোনো অংগ সংগঠন না। তবে আমরা ইসলামি আন্দোলনের সহযোগী সংগঠন। আমরা আমাদের কাজ স্বাধীনভাবেই করি। কাজ কর্মে তাদের পরামর্শ নেই। প্রয়োজনে সহযোগিতা নেই। এর চেয়ে বেশি কিছু না।

[সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্য নেতাদের সাংক্ষাৎকারও পর্যায়ক্রমে প্রকাশ হবে আওয়ার ইসলামে, পড়তে চোখ রাখুন]

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম / আরআর


সম্পর্কিত খবর