বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


টপ টেন ইসলামিক সিঙ্গার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাইফ সিরাজ : মুখে মুখে জনপ্রিয় এখন ইসলামি সঙ্গীত। তারচেয়ে বেশি প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী। ইসলামি সংগীত নিয়ে এ মুহূর্তে বিশ্ব মাতাচ্ছেন অনেকেই। এমন দশজন সংগীত শিল্পীর সঙ্গে বিস্তারিত পরিচয় জেনে রাখুন।

 ০১. আহমেদ বুখাতির

ননমিউজিক্যাল ইসলামিক সঙ্গীতের জনপ্রিয় এই শিল্পি ১৯৭৫ সালের ১৬ অক্টোবরে আরব আমিরাতের শারজায় জন্ম গ্রহণ করেন। বিশ বছর বয়স থেকেই তিনি আরবী, ইংরেজি ও ফরাসী ভাষায় তিনি গান লিখেন, সুর করেন এবং গেয়ে থাকেন। আরব আমিরাতে বেস্ট সেলার হয় তার প্রথম দু’টি এলবাম ‘ইনতাসাফ আল লাইল’ ২০০০ সালে এবং ‘আল কুদসু তুনাদিনা’ ২০০১ সালে। ২০০৩ সালে রিলিজ হয় তার তৃতীয় এলবাম ‘ফারতাকি’।

আরব আমিরাত ও ইউরোপে প্রায় এক লক্ষ কপি বিক্রি হয় এই এলবামটি। ‘সামতান’ পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলে ’০৪-এ। বিক্রি হয় দেড় লক্ষ কপি। ‘দা’নী’ও রেকর্ড করে পাঁচ সালে। ২০০৭ সালে ‘হাসানাত’ এলবামটি ‘ভার্জিন টপ চার্টে’ থাকে সাত সপ্তাহ পর্যন্ত। বিক্রি হয় আড়াই লক্ষ কপিরও ওপরে। এরপর আরও দুটি এলবাম আসে ‘মোমেন্ট উইথ আল্লাহ’ ও ‘প্রোফেট অব পীস’ যথারীতি রেকর্ড করে এই দু’টিও। প্রায় একুশ লক্ষ ছুঁই ছুঁই লাইক আছে এখন পর্যন্ত তার ফেসবুক পেজে। ইউটিউবে তার জনপ্রিয় গানগুলো হলো আতফালানা আহবাবানা, ইক্বরা’ উখাইয়্যা, ইয়া উম্মী, ফরগীব মি ইত্যাদি।

০২. মাহের জাইন

মাহের মুস্তফা মাহের জাইন। জন্মেছিলেন লেবাননের ত্রিপলিতে ১৬ জুলাই ১৯৮১ সালে। আধুনিক ইসলামি সঙ্গীত দুনিয়ায় তুমুল জনপ্রিয় এই এই শিল্পি বর্তমানে বসবাস করের সুইডেনে। তার এলবাম রিলিজ হয় বিভিন্ন ভাষায়। থাকে মিউজিক্যাল, ননমিউজিক্যাল ভোকাল, ইন্টারনেশনাল ভার্সন। তিনি একাধারে গান লেখেন, সুর করেন, সঙ্গীত পরিচালনা করেন এবং কম্পেজিশনও করেন।

২০০৯ সালে এওয়াকিং রেকর্ডস থেকে তার প্রথম এলবাম ‘থেংক ইউ আল্লাহ’ রিলিজ হয়। এলবামটি আটবার ‘প্লাটিনাম সেলস রেকর্ড’ করে মালয়েশিয়ায় এবং ইন্দোনেশিয়ায়। ২০১১ সালে তিনি ১৮মত ‘অনুগেরাহ ইন্ডাস্ট্রি মিউজিক এওয়ার্ড’ মালয়েশিয়ার জন্য মনোনীত হন। ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় এলবাম ‘ফরগিভ মি’।

এলবামটি মালয়েশিয়ায় চার বার ‘প্লাটিনাম সেলস রেকর্ড’ করে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিশরে সবধরণের সঙ্গীত এলবামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেস্ট সেলার হয়। ইউটিউবে নাম্বার ওয়ান ফর মি, ইয়া নবী সালাম আলাইকা, ইনশা আল্লাহ, বারাকাল্লাহ, রামাদান, পেলেস্টাইন টুমরো উইল বি ফ্রি, আল হুব্বু এয়াসুদ সবচেয়ে জনপ্রিয় গান মাহেরের। ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আড়াই কোটি প্লাস লাইক পাওয়া মাহের আছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

০৩. সামী ইউসুফ

দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট এর ভাষায় ভয়েস অব ইসলাম সামী ইউসুফ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামী সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তোলেন এই গুণী শিল্পি। ১৯৮০ সালে ইরানের তেহরানে জন্মগ্রহণকারী সামী ইউসুফ বর্তমানে বৃটেনের নাগরিক। ইসলামী সঙ্গীতের জগতে ২০০৩ সালে ‘আল মুআল্লিম’ এলবাম রিলিজের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়। প্রথম এলবামেই দৃষ্টি কেড়ে নেন ইসলামী গানের অ্যালবাম। এরপর একে একে তার ছয়টি একক এলবাম রিলিজ হয়।

সবগুলোই জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে। ইয়া উম্মাহ ২০০৫ সালে, হোয়্যারএভার ইউ আর ২০১০ সালে, সালাম ২০১২ সালে, দ্য সেন্টার ২০১৪ সালে, বারাকাহ ২০১৬ সালে। মধ্য প্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও তুরস্কে বেস্ট সেলার হয় সালাম এলবামটি।

দ্য সেন্টারও বিক্রিতে রেকর্ড করে। সামী ইউসুফের সাপ্লিকেশন, আসমাউল হুসনা, প্যালেস্টাইন ফরএভার, আই এম ইয়োর হোপ, হিলিং, শাইন, ইন্না ফিল জান্নাতি, মাওলা এয়া প্রভৃতি গান জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে। ছিয়াত্তর লক্ষ লাইক নিয়ে সামী ইউসুফের ফেসবুক পেজটি সরব রয়েছে।

০৪. জুনায়েদ জামশেদ

জুনায়েদ জামশেদ ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম গ্রহণ করেন। লাহোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন করার পর শখের বশে বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড দল গড়েন। প্রথম এ্যালবাম “দিল দিল পাকিস্তান” রিলিজ হওয়ার পর ঝড় ওঠে সঙ্গীত অঙ্গনে। জুনায়েদ সঙ্গীতকেই নেন পেশা হিসেবে।

একের পর এক আসতে থাকে “উস রাহ পর” “দিল কী বাঁত” সহ আরও কয়েকটি হিট এ্যালবাম। ২০০২ সালে সঙ্গীত ক্যারিয়ার ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ২০০৩ সালে স্থায়ীভাবে বিদায় জানান মিউজিক্যাল সঙ্গীতকে।

শুরু হল নতুন গল্প। তাঁর মায়াবী কন্ঠের নিবেদনে মুগ্ধ ইসলামী সঙ্গীতের অঙ্গন। ২০০৫ সালে রিলিজ হয় তার প্রথম ইসলামী এ্যালবাম “জালওয়া-ই-জানা”। ২০০৬-এ আসে “মাহবুব-ই-ইয়াজদান”, “বদরুদ্দোজা” ’০৮-এ “বাদিউজ্জামান”, ’০৯-এ এবং ২০১০ সালে আসে “হাদী-উল-আনাম”, ১১ সালে ‘রাব্বী জিদনী ইলমা’, ২০১৩ সালে ‘নুরুল হুদা’।

পৃথিবী ব্যাপী ননমিউজিক্যাল হামদ নাত শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম জুনায়েদ জামশেদ। তিনি যখন মুফতি তকী উসমানীর লেখা “এলাহী তেরী চৌকাট পর ভিখারী বানকে আয়া হো” আথবা “মুঝে জিন্দেগী মে এয়া রব” গেয়ে উঠেন তখন হৃদয়ে এক নতুন মায়াবী অনুভবের সৃষ্টি হয়। তার নামে ফেসবুকে কয়েকটি পেজ আছে। ৫৬ লক্ষেরও অধিক লাইকের পেজটিও ভেরিফায়েড নয়।

০৫. রাইফ

মিশরীয় বঙশোদ্ভূত আমেরিকান ইসলামী গায়ক। ১৯৮২ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্ম নেওয়া এই শিল্পি রক ঘরানার ইসলামী গায়ক। ২০১১ সাল থেকে তার সঙ্গীত ক্যারিয়ার শুরু। এওয়াকিং রেকর্ড থেকে ২০১৪ সালে রিলিজ হয় তার প্রথম এলবাম ‘দ্য পাথ’। এই এলবামে তার সঙ্গে মাহের জাইন কণ্ঠ দেয় একটি গানে।

২০১১ সালে ‘ইটস জুমুআ’ মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে আলোচনায় আসেন রাইফ। এরপর ২০১২ সালে আসে ইয়োর মার্সি, রাব্বী আই এম ইয়োরস, উইথ ইউ, ম্যান ইন দ্য মিরর নামক চারটি ভিডিওগ্রাফি। ’১৪ তে আসে সো রিয়েল, ইউ আর দ্য ওয়ান (কার্টুন)। ’১৫ সালে আসে ইউ আর দ্য ওয়ানের মিউজিক ভিডিও। ইতোমধ্যে রাইফ মাহের জাইন, ইরফান মক্কী, মেসুত কুর্তিস ও হামজাহ নামিরাহ-এর সঙ্গে একাধিক কনসার্টে পারফর্ম করেছেন। তার ফেসবুক পেজে লাইক আছে দুই লাখের কিছু বেশি।

০৬. মেসুত কুর্তিস

১৯৮১ সালে মেসুত তুর্কি বংশোদ্ভূত এক পরিবারে মেসিডোনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষিত মেসুত উচ্চ শিক্ষার জন্য বৃটেনে আসেন। তিনি মনোবিজ্ঞান, ইসলামিক আইন ও জুরিস্প্রুডেন্সের ওপর উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। লন্ডনেই ইসলামি গান গাইতে শুরু করেন। ২০০৪ সালে তার এলবাম ‘সালাওয়াত’ রিলিজ পায়।

২০০৯ সালে ‘বিলাভ’ এবং ২০১৩ সালে ‘তাবাসসাম’ রিলিজ হয়। অল্প সময়েই তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০১৩ সালে মাহের জাইনের সঙ্গে ‘সুবহানাকা সুবহানাক’ গানে আরবীর অংশে কণ্ঠ দিয়ে তিনি প্রশংসিত হন। ‘মাওলা এয়া সাল্লি ওয়া সাল্লাম’ তার অন্যতম জনপ্রিয় গান।

০৭. হামজা নামিরা

মিশরীয় পরিবারে ১৯৮০ সালে সৌদি আরবে জন্ম গ্রহণ করেন হামজা নামিরা। তিনি একাধারে গায়ক, সুরকার, গীতিকার, কম্পোজার ও সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৮ সালে রিলিজ হয় তার প্রথম এলবাম ‘ইলহাম মায়ী’। ২০১১ সালে আসে ইনসান। ২০১৪ সালে রিলিজ হয় ‘ইসমা’নী’।

ইনসান. তাজরেবা, উসফুরান, ইয়া ইজরাঈল, হিলা হিলা ইয়া মাতার প্রভৃতি তার জনপ্রিয় গান। ২০১৩ সালে কানাডায় বিশাল কনসার্টে মাহের জাইনের সঙ্গে যৌথ পারফর্মেন্স করেন তিনি। তিনি নানা রকম সামাজিক কর্মকা-ে জড়িত। ‘লাইফ উইদাউট স্মোকিং’ নামক একটা ক্যাম্পেইন করেন নিয়মিত।

০৮. হ্যারিস জে

২০১৩ সালে এওয়াকিং রেকর্ডের প্রথম টেলেন্ট কন্টেস্টে ওঠে আসে হ্যারিস জে। যেখানে বিচারকের আসনে ছিলেন মাহের জাইনের মত শিল্পিরা। লন্ডনের চেলসিতে জন্ম নেওয়া বৃটিশ এই তরুণ ইতোমধ্যে সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। মাত্র বার বছর বয়সে হ্যারিস চেলসি একাডেমির হয়ে ফুটবল মাঠে তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটাচ্ছিল।

এমন সময় এওয়াকিং রেকর্ডের কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করে সে। ইতোমধ্যে হ্যারিস দক্ষিণ আফ্রিকায় মেন্ডেলা ট্রিবিউন কনসার্টে পারফর্মেন্স করেছে। তার প্রথম এলবাম সালাম। রিলিজ হয় ২০১৫ সালের আগস্টে। বিশ^খ্যাত ‘ব্রিট স্কুল অব পারফর্মিং আর্ট থেকে ২০১৫ সালে গ্রাজুয়েশন করেছে হ্যারিস। ইউটিউবে এক কোটি বাইশ লক্ষ হিট আছে তার ‘সালামু আলাইকুম’ মিউজিক ভিডিওতে।

০৯. ইউসুফ ইসলাম

ক্যাট স্টিভেন্স হিসেবে মেলবোর্নে জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৮ সালে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ক্যাট স্টিভেন্স নামেই দাপিয়ে বেড়ান সঙ্গীতের ভূবনে। ১৯৭৭ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইউসুফ ইসলাম নাম ধারণ করেন। ক্যাট স্টিভেন্সের এলবাম মানেই টপচার্টে। ‘ম্যাথু এন্ড সান’ এলবামটি বৃটেনের টপচার্টের দুয়ে অবস্থান করে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত।

এরপর ১৯৯৫ থেকে ইসলামী সংগীতে আত্মপ্রকাশ করেন ইউসুফ ইসলাম। এন আদার কাপ, রোড সিংগার ও এ ইজ ফর আল্লাহ (শিশুদের)। তার জনপ্রিয় ইসলামী গানেরম মধ্যে ‘তালাআল বাদরু আলাইনা’, ‘এ ইজ ফর আল্লাহ’ ও ‘পীস ট্রেইন সাবার ওপরে।

১০. মুহিব খান

বাংলাদেশে মৌলিক ইসলামী গানের অন্যতম একজন গায়ক মুহিব খান। ১৪ অক্টোবর ১৯৭৯ সালে কিশোরগঞ্জে জন্ম তার। স্থানীয় ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে তার সঙ্গীত প্রতিভার বিকাশ ঘটে। কোন এলবাম বের করার আগেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই শিল্পি। তিনি একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক। ইসলামী সঙ্গীত পিয়সীদের কাছে তিনি জাগ্রত কবি হিসেবে পরিচিত। ২০০২ সালে তার প্রথম এলবাম সীমান্ত খুলে দাও রিলিজ হয়।

এরপর একে একে দিন বদলের দিন এসছে, ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, মরুসাহারা, শিকল ভাঙ্গার ঝড়, ইয়ে মেরা ওয়াতান ও আবার যুদ্ধ হবে রিলিজ হয়। জনপ্রিয় হয় প্রতিটি এলবামই। ২০১৫ সালে তার দুটি এলবাম রিলিজ হয় অনলাইনে। বিনামূল্যে শ্রোদের জন্য আপলোড করেন শিল্পি নিজেই। ‘নতুন ইশতেহার আসছে’ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী ভিত্তিক ‘দাস্তানে মুহাম্মদ’।

দাস্তানে মুহাম্মদ মূলত একটি গানে একটি এলবাম। দেশাত্ববোধক গান করেছেন অনেক। ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি, জেগেছে বাংলাদেশ, ইয়ে মেরা ওয়াতান, আবার যুদ্ধ হবে, মেক্সিকো সিটি ইত্যাদি তার দেশাত্ববোধক জনপ্রিয় গান। কেন কেন, তাবলীগ তাবলীগ চলে, ইরাক আমার ভাই, এদেশে আল্লাহু আকবারের সুরে সূর্য ওঠে, হে যুবক প্রভৃতি জনপ্রিয় গানের উপহার দিয়েছেন তিনি।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ